একগুচ্ছ হেমন্তের কবিতা-সামসুন্নাহার ফারুক

হৈমন্তী সুরের কীর্তন
সামসুন্নাহার ফারুক
দমকা বাতাসে উড়ছে ঝরা পাতা
উত্তরে হাওয়ারা হেসে কুটিকুটি
হিমহিম সকালের হেমাঙ্গী রোদে
উদ্বেলিত তারুণ্য উত্তাল বর্ণিল
ঝিলমিল অরণ্যে পাতার মিছিল
স্বপ্নের কেন্দ্র থেকে উড়ন্ত ফানুস
মহাকাশ কক্ষপথে ঘূর্ণিদোলায়
জ্যাতিমিক আঁক জোকে শূণ্যে মেলায়
ধানিরঙা হৈমন্তী হেসে হেসে বলে
জানো কি অগ্নিবর্ণ বাহারী পাতারা
নিসর্গের উঠোনে অনিন্দ্য প্রহরে
কে তোলে এমন সুর এই নভোতলে
মন্ত্রমুগ্ধতার কলকাঠি কে নাড়ে
কোন সে যাদুকর! দেখেছ কি তারে ?
কি অপরূপ এই সুরের ঘূর্ণন
কে গায় মোহময় এমন কীর্তন ?
হৈম হাজির
সামসুন্নাহার ফারুক
আঘ্রাণী কৌতুকে হেসে বলে কানে কানে
হৈম হয়েছে হাজির নিসর্গ তা জানে
নবান্নের উৎসবে মেতেছে উল্লাসে
গৃহিনীর ভাড়ারেতে সুখের সম্পাশ
ইষ্টি কুটুমের মেলা ভরন্ত উঠোন
পিঠা পুলি মিঠা বুলি মধু আয়োজন
সকালের সোনারোদ আধো জাগরণে
সুখ সুখ শিহরণ তোলে নিউরণে
পিকনিকে মেতে ওঠে কিশোর কিশোরী
আনন্দ জোয়ারে ভাসে সুখ সহচরী
সময়ের ফ্ল্যাশব্যাকে কত শত কথা
খোয়া খোয়া জোছনায় ভাঙ্গে নীরবতা
কুয়াশার ইন্দ্রজাল হৃদয়ের স্ক্রীনে
হেমন্তের আলোছায়া জামদানী বোনে।
সুখিত লগন
সামসুন্নাহার ফারুক
সাজিযে স্বপ্ন ডালি বিলোল প্রভাতে
কৃষাণীর রাঙা ঠোঁটে ঠোঁটে তৃপ্তি বিলাতে
সুখের দেউটি জ্বেলে
সুখময় তুমি এলে
ঝিরিঝিরি বাতাসে রঞ্জিকা উচ্ছাসে
সুশোভিত সময়ের আগমনী উল্লাসে
শিশির সিক্ত সবুজের গায়
নবান্ন অঙ্গনে ভোরের সূর্যোদয়
জাফরানী আবীর ছড়ায়
অশান্ত কথারা অনন্ত বিহারে
পলকা ভেসে যায় ইথারে ইথারে
নীলিমায় নীলে শঙ্খ মিছিলে
হেমাঙ্গী চাদরে বিশ্বস্ত আঁচলে
হেসে ওঠে শুভক্ষণ
বাংলার ঝলকিত রূপে কার্তিক জোছনায়
মায়াবী জলতরঙ্গ বাজে হৈমন্তী আদরে
আহ্লাদে ফেটে পড়ে পাগলা পবন
নিসর্গে দাদরা বাজায় মগনী লগন।
কে তুমি
সামসুন্নাহার ফারুক
কে তুমি ঝরাতে এলে
জ্বলন্ত আগুন
কিংশুক আবেগ ভরা
ফুটন্ত ফাগুন
ঝরাপাতার নাগর দোলায়
চৈতালীর ফলন্ত আঙ্গিনায়
কে তুমি হেসে হেসে এলে
হলুদিয়া শস্যের ঘ্রাণে
কোকিলের কুহু তানে
দখিনার চঞ্চলতায়
কে তুমি ?
হৃদয়ের সবটুকু স্পন্দনে
ভাল লাগার দুরন্ত ঘূর্ণনে
ঘ্রাণ মৌ মৌ আমে বোলে
কৃষানীর নকশী আঁচলে
কে তুমি ছড়িয়ে দিলে
পার্বণের দোলা
খরতর দ্বিপ্রহরে মোহময় আবশে
ভাসিয়ে নিলে জুড়ালে জীবন
ভাললাগার ক্যানভাসে অলখে এঁকে দিল
অগ্নিময় সময়ের মদির কাঁপন।