সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে রানের পাহাড়ে বাংলাদেশ

ভালুকানিউজ ডটকম; অনলাইন ডেস্ক: প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও চমৎকার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের কারিশমা দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। সফরকারী বাংলাদেশ এদিন দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান নিয়ে। কিউইদের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও জাভেদ মিয়াদাদের করা ৪১ বছরের পুরনো রেকর্ডও (২৮১) ভেঙে দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক।
রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন সাকিব ও মুশফিক। তাদের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটিতেই প্রথম টেস্টে দাপট দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।এমনকি নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও এ জুটির রেকর্ড সর্বোচ্চ। পঞ্চম উইকেটে কিউইদের মাটিতে আগের রেকর্ডটি ছিল ২৮১ রানের। ১৯৭৬ সালে জাভেদ মিঁয়াদাদ ও আসিফ ইকবাল করেছিলেন সেই জুটি।
সাকিবের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি:
টেস্টে আগে কখনও দেড়শ’ করতে পারেননি সাকিব। এর বাইরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কখনই ছুঁতে পারেননি ১৩০। সেই সাকিব আল হাসানই গড়লেন টেস্টে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড! ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ২১৭ করে সাকিব ছাড়িয়ে গেলেন খুলনার তামিমকে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ২০৬ রান করেছিলেন তামিম। সাকিব ছাড়িয়ে যাওয়ার সময় মাঠের বাইরে থেকে হাসিমুখে তালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন তামিম।
সাকিব দিন শুরু করেছিলেন ৫ রান নিয়ে। ১৫০ বলে স্পর্শ করেন চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। অসাধারণ এক জুটিতে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিমও। সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে যান দুজন। গড়েন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড।
সেঞ্চুরিটা কাছাকাছি সময়ে হলেও ক্রমে মুশফিককে ছাড়িয়ে অনেকটা এগিয়ে যান সাকিব। ১৯১ বলে ছুয়েঁছেন দেড়শ। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে দারুণ এক স্কয়ার কাটে চার মেরে দুইশর ঠিকানায় পৌঁছেন ২৫৩ বলে।
পরের ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টের বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ১৫৯ রানে ফিরলেন মুশফিক। ভাঙল ৩৫৯ রানের ম্যারাথন জুটি। সাকিব তখন অপরাজিত ২০৫ রানে। খানিক পরই রেকর্ড করে নিয়েছেন শুধু নিজের।
ইনিংসটির পথে টেস্টে ৩ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়েছেন সাকিব। মুমিনুল হকের ২৭ বাউন্ডারি ছাড়িয়ে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি (৩১) বাউন্ডারির রেকর্ডও এখন তার। সাকিব ও তামিম ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি আছে আর কেবল মুশফিকেরই। বাংলাদেশকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে নিউ জিল্যান্ডে ডাবল সেঞ্চুরি সাকিবের আগে আছে আর মাত্র পাঁচজনের। পাকিস্তানের মুশতাক মোহম্মদ, জাভেদ মিয়ানদাদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ, শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা ও কুমার সাঙ্গাকারা। ভারতের কেউ এখনও করতে পারেননি।
মুশফিকের ২৬০ বল খেলে ১৫৯ রান:
২৬০ বল খেলে ১৫৯ রান করেন বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম। এরমাঝে চারের মার ছিল ২৩ টি। একটা ছ’এর মার।
মুশফিকের কয়েন রহস্য:
অনেক দিন ধরেই রান খরায় ভুগছিলেন মুশফিকুর রহিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৪২ রান করে রানে ফেরার আভাসও ছিল। কিন্তু ইনজুরির কবলে পড়ে পরের দুই ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলা হয়নি বাংলাদেশী টেস্ট স্কিপারের। আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের প্রথম টেস্টে রানের দেখা পেলেন মুশফিক। দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকেরও। তবে শতক উদযাপন করার পর পকেটে কি যেন খুজছিলেন টাইগারদের রান মেশিন খ্যাত এ ব্যাটসম্যান। অবশেষে পেয়েও গেলেন তা। পকেট থেকে সেই জিনিস বের করে দেখালেন ড্রেসিংরুমের দিকে। মুখে দুষ্টুমির হাসি। দর্শকরা দ্বিধায় ছিলেন কি দেখাচ্ছেন মুশফিক!
পরে চা বিরতিতে এসে সে রহস্যের উন্মোচন করলেন মুশফিক নিজেই। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে যখন খেলা থেকে দূরে ছিলেন, তখনকার একদিনের ঘটনা। মুশফিকের পকেট থেকে একদিন একটা কয়েন পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। সামনে থাকা তামিম ইকবাল সেটি কুড়িয়ে মুশফিকের হাতে তুলে দিতে দিতে বলেন, ‘কয়েনটা পকেটে রেখে দিয়েন। এটা পকেটে রাখলে রান পাবেন।’ দুষ্টুমিটা বুঝেও মুশফিকের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘এটা রাখলে রান পাব মানে! কেন?’ তামিম বিষয়টাকে আরো রহস্যময় করে তুলে বলেছিলেন, ‘কয়েনটা পকেটে রেখেই দেখেন না, রান পাবেন…।’ এর আগে বৃহস্পতিবার টেস্টের প্রথম দিনে বৃষ্টি বিঘ্নিত খেলায় বাংলাদেশের রান ছিল ১৬০/৩।