আসছে ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’

অনলাইন ডেস্ক: প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কল সেন্টার এজেন্ট ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী হিসেবে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
একনেক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উদ্যোগী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৮১.৯০ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৭-তে প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৯ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের এলাকা হিসেবে ধরা হয়েছে বৃহত্তর ২১ জেলার ২১টি উপজেলা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- আইসিটির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি, আইসিটি ইকো-সিস্টেমে নারীদের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা এবং আইসিটির মাধ্যমে নারীদের স্ব-কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো- ফ্রিল্যান্সার নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরির জন্য তিনটি লেভেলে প্রশিক্ষণ প্রদান, নারী আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার তৈরির জন্য তিনটি লেভেলে প্রশিক্ষণ, কল সেন্টার এজেন্ট তৈরির জন্য তিনটি লেভেলে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন লেভেলের প্রশিক্ষণার্থীদের ছয় হাজার ৭২০টি ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য অনুদান প্রদান, কম্পিউটার-কম্পিউটার সামগ্রী ও ফার্নিচার সংগ্রহ, ইন্টার্নশিপ ভাতা প্রদান, একটি যানবাহন (মাইক্রোবাস) সংগ্রহ।
একনেক সূত্রে জানা গেছে, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০২০) আওতায় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উপর গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুচ্ছেদ ১২.৩.৩ এ সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ক্ষমতায়ন, তাদের দক্ষতা ও শিক্ষার বিষয়ে আইসিটি সংক্রান্ত মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পলিসি ২০১৫ ও আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এ আইসিটি খাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন কোম্পানি (আইআইএফসি) কর্তৃক একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে আর এ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আলোকে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অনুমোদন নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে এবং ডিপিপি অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দের চাহিদা ৪১.২৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্প্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের বৃহত্তর ২১টি জেলার ২১টি উপজেলায় সর্বমোট ১০ হাজার ৫০০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীর তিন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রায় চার হাজার নারীকে ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা, আরও চার হাজার নারীকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রায় দুই হাজার ৫০০ জন নারীকে কল সেন্টার এজেন্ট হিসেব গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই স্তরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন শারমিন আক্তার। ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে চায়। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে এবং তাদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ানো সম্ভব হবে।