ঢাকাবিভাগীয় খবর

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক খুন

অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জে শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র (২১) নামে এক কলেজছাত্র শিক্ষানবিশ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। গত শুক্রবার ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পরিধেয় কাপড় ও জুতা দেখে নিহতের পরিবারের সদস্যরা তার লাশ শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে তার শোকার্ত সহপাঠী ও সহকর্মীরা হাসপাতাল মর্গে ছুটে যান। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশের ধারণা।
নিহত শুভ্র নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লালপুর এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক কামাল সিদ্দিকীর ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত যুগের চিন্তা পত্রিকায় শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। শুক্রবার ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে
নিখোঁজ হলে শনিবার দুপুরে তার বাবা বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেন। তবে এর আগেই শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিঙ্ক রোডের ভূঁইগড় এলাকার একটি ডোবা থেকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে শুভ্রর লাশ উদ্ধার করে। তার পরিবারের সদস্যরা পরদিন সেটি শনাক্ত করেন।
নিহতের বাবা কামাল সিদ্দিকী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সবার সঙ্গে খাবার খাওয়ার পর শুভ্র নিজের রুমে ঘুমাতে যায়। পর দিন শুক্রবার ফজরের নামাজের সময় তাকে ডাকতে গিয়ে রুমে পাওয়া যায়নি। তখন মনে করেছিলাম সে প্রাতঃভ্রমণে গেছে। কিন্তু ফিরে না আসায় সকাল ৯টায় তার মোবাইল ফোনে রিং করা হয়। কিন্তু কেউ সেটি রিসিভ করেনি। আবারও ফোন করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, পৌনে ৬টায় প্রতিবেশীরা শুভ্রকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের নামে কোথাও কোনো অভিযোগ পাওয়া যাবে না। খুব শান্ত ছেলে। আমরা চিন্তাও করতে পারি না, ওর কোনো শত্রু থাকতে পারে। কে আমার এত বড় ক্ষতি করল?
দৈনিক যুগের চিন্তার নির্বাহী সম্পাদক এজাজ কোরেশী বলেন, ঈদের ছুটির আগের দিন পর্যন্ত শুভ্র আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে। ছুটির পর অফিস খোলার আগে সে টেলিফোনে সম্পাদক আবু আল মোরছালিন বাবলাকে জানিয়েছিল, তার বাবা অসুস্থ। তাই সে কয়েকদিন পত্রিকার কাজে আসতে পারবে না।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, শনিবার নিহতের লাশ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতনামা হিসেবে ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ২-৩ দিন আগে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। একদিন পরই তার পরিচয় পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মো. শরফুদ্দিন বলেন, লাশ উদ্ধারের সময়ই পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। কারণ লাশের হাত-পা বাঁধা ছিল। গলায় একটি কাপড় পেঁচানো ছিল। এসব দেখে মনে হয়েছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর খুনিরা লাশ ডোবায় ফেলে গেছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তেমন বেগ পেতে হবে না। পুলিশ ইতিমধ্যেই রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমরা এখনও রিপোর্ট দিইনি। শুভ্রর লাশের মাথায় ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় রক্ত জমাটবাঁধা রয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button