মারধর খেয়েও ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ নারী সাংবাদিকের ছবি ভাইরাল

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের সবরিমালা মন্দিরে দুই নারী প্রবেশের ঘটনায় কেরালায় বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েও অশ্রুসিক্ত চোখে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এক নারীর ছবি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সাহস ও পেশাদারিত্বের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছেন।
মালায়ালম ভাষার চ্যানেল কাইরালি টেলিভিশনে কাজ করেন সাজিলা আলি ফাথিম। বিজেপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের সময় তাকে কয়েকবার মারধর করা হয়েছে। হয়রানিরও শিকার হয়েছেন তিনি।
কিন্তু এতে তিনি দমে না গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতে অশ্রুসিক্ত চোখে ক্যামেরা ধরে রেখেছেন।
গণমাধ্যমে শাজিলা বলেন, কেউ একজন আমার পিঠে সজোরে লাথি মারে। বুঝতে পারিনি কোথা থেকে লাথি মারা হয়েছে।
‘আমি ব্যথায় নিচু হয়ে পড়লে হামলাকারীরা আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেটি আঁকড়ে ধরে থাকি। টানাহেঁচড়ার কারণে আমি ঘাড়ে আঘাত পেয়েছি।’
আহত সাজিলকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি ভয় পেয়ে কাঁদছিলাম না। বরং নিজেকে এত অসহায় লাগছিল যে আমি কান্না আটকাতে পারিনি।
‘পাঁচ-ছয়জন লোক যখন পেছন থেকে এসে আমাকে আঘাত করে, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ঠেলে মাটিতে ফেলে দেয়, তখন আমার কী করার ছিল। আমি কিভাবে পাল্টা আঘাত করতাম?’
সাজিলা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি আমি ভিডিও করতে পারছি না ভেবে কাঁদছিলাম। যে কারণে আমি আবার ক্যামেরা তুলে নিই এবং সেটি চালু করে ভিডিও শুরু করি। আমি চাচ্ছিলাম না লোকজন আমার কষ্টের বিষয়টি বুঝতে পারুক। তাই আমি ক্যামেরার পেছনে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছিলাম।
গত বুধবার ভোরে সবরিমালা মন্দিরে ঋতুমতী দুই নারী প্রবেশের ঘটনায় কেরলার বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
শতাব্দী প্রাচীন ভারতের এ মন্দিরটিতে প্রথম থেকেই ঋতুমতী নারীদের প্রবেশ নিষেধ ছিল, যা নিয়ে নারীবাদী সংগঠনগুলোর দীর্ঘ আন্দোলন করে আসছিলেন।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এক আদেশে ওই নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে তা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন।
সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পরও মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্ত-সমর্থকদের পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নারীদের মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেয়। এমনকি পুলিশ পাহারায় নারীরা সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
কিন্তু গত বুধবার ভোরে ৪০ বছরের বিন্দু আম্মিনি ও ৩৯ বছরের কনকা দুর্গামন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার পরই রাজ্যজুড়ে শুরু হয় তুলকালাম।
বিন্দু ও কনকাকে মন্দির থেকে বের করে দিয়ে শুরু হয় শুদ্ধিকরণ। খবর পেয়ে বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে ভাংচুর, বিক্ষোভ শুরু করে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা।
ওই দিন প্রাদেশিক রাজধানী থিরুভানান্থাপুরামে একটি সঙ্গ পরিবারের বিক্ষোভের ছবি সংগ্রহ করতে সেখানে যান সাজিলা। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা তার ওপর হামলা করে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের জন্য পুনরায় চালু হল স্পেশাল পাস
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অসংখ্য প্রবাসীরা পাড়ি জমিয়েছে জীবিকার টানে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সকল অবৈধ অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি থ্রি প্লাস ওয়ান প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। তারপর থেকেই মালয়েশিয়া জুড়ে শুরু হয় চিরুনি অভিযান।
এই অভিযানের কারণে অনেক অবৈধ অভিবাসী দেশে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে পাচ্ছেন না স্পেশাল পাস। এতে করে অনেক অবৈধ অভিবাসীকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অভিবাসন বিভাগ অক্টোবর থেকে পুনরায় স্পেশাল পাস চালু করলেও জুড়ে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত।
নতুন এই নিয়মে স্পেশাল পাস নিতে কয়েকটি ক্যাটাগরি অনুযায়ী জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। ১ মাসের কম সময় অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের দৈনিক ৩০ রিঙ্গিত, ১ থেকে ৬ মাস মেয়াদি তাদের জন্য ১হাজার রিঙ্গিত, ৬ মাস থেকে ৩ বছর অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের ২ হাজার রিঙ্গিত, ৩ বছরের বেশি সময় অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের ৩ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে স্পেশাল পাস নিতে হবে।
তবে এই জরিমানা দেয়ার পরও অনেকের অভিযোগ ইমিগ্রেশন থেকে স্পেশাল পাস পাচ্ছেন না তারা। অভিবাসী শ্রমিকরা বলেন, ‘দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস দেয়া হলেও ইমিগ্রেশন থেকে স্পেশাল পাস দিচ্ছে না।’
যে সকল অবৈধ অভিবাসীরা নদী পথে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছে অথবা দেশটির অভিবাসন দফতরে কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই তাদের ২৯’শ রিঙ্গিত জরিমানা দিতে হবে পাশাপাশি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস হতে ট্রাভেল পাস সংগ্রহের পাশাপাশি সাথে সাত দিনের মধ্যে ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট টিকিট থাকতে হবে।
অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট, বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাসসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত স্পেশাল পাস না পেয়ে ফেরত আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগকে দুষছেন দূতাবাসের এই কর্মকর্তা। হায়দার আলি(ট্রাভেল পাস বিভাগ) বলেন,’দেশে যেতে পারছে না তারা এই বিষয়ে আমার বলার কিছু নাই। তাদের যদি ইমিগ্রেশনে সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নাই।’ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ১২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে।
এর মধ্য ২ লাখ অভিবাসী অবৈধ। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার অবৈধ শ্রমিককে গ্রেফতার করে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। অবৈধ হওয়া এসব শ্রমিকরা পুনরায় দেশে ফেরার সুযোগ পেলেও ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে কাঙ্ক্ষিত স্পেশাল পাস না পাওয়ায় দেশে ফেরত যেতে পারছেন না অনেকেই।
তাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ হাইকমিশন যদি দেশটির অভিবাসন বিভাগের সঙ্গে স্পেশাল পাসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শিথিল ও সহজতর করে তাহলে উপকৃত হবেন এসব শ্রমিকরা।