জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভালুকা নিউজ ডেস্ক : আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন নজরুল। রবীন্দ্র-পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ এ কবি তার কবিতায় তৈরি করেন এক নতুন ভাষাভঙ্গি। সেই ভাষাভঙ্গিতে তিনি যা রচনা করেছেন, তা আমাদের পরাধীনতা থেকে মুক্তির মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে। তার কবিতায় বিদ্রোহ, প্রেম, মনুষ্যত্ববোধের দিকও প্রবলভাবে উপস্থিত।
কাজী নজরুল ইসলাম অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
মধ্যবয়সে কাজী নজরুল ইসলাম পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালিদের বিজয় লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে তারিখে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
নজরুল তার শেষ ভাষনে তার অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। তার এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তাঁর সমাধি রচিত হয়। তার জানাজার নামাযে ১০ হাজারের মত মানুষ অংশ নেয়। জানাজা নামায আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা মন্ডিত নজরুলের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু উপলক্ষ্যে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়। আর ভারতের আইনসভায় কবির সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর গৃহীত কর্মসূচি:
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক সংবাদ বিঞ্জপ্তিতে বলা হয়, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকালে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমাবেশ ও সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্পার্পণ এবং ফাতেহা পাঠ। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকাল ৮টায় জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য নিবেদন, ফাতেয়া পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
বিশ্ব বাঙ্গালি সম্মেলন ও বিশ্ব কবিতা কংগ্রেস সকালে ৮টা ৩০ মিনিটে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও রুহের মাগফেরাত কামনা সহ মোনাজাত এবং কবিতা পাঠের আয়োজন করেছে । এ দিকে কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আজ বিকেল ৪টায় একাডেমীর কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তণে একক বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ।
৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতিজড়িত কুমিল্লায় নজরুল পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে চেতনায় নজরুল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এছাড়াও দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, হাম-নাত পরিবেশন ও দোয়া মাহফিল।
কবির ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ভালুকা নিউজ.কম পরিবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।