নিরাপদ সড়ক, ভাড়া বিরম্ভনা ও কিছু কথা

আবুল বাশার শেখ
আমি বড় কোন লেখক কিংবা সমালোচক নই, অজপাড়াগাঁয়ের একজন সংবাদকর্মী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেহেতু সংবাদের পেছনে ছুটতে হয় সেহেতু বিবেকের তাড়নায় দু’টি কথা না লিখে পারলাম না।
উন্নয়নের ধারায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত অনেক বিষয়ই আছে। তারমধ্যে আলোচ্য যে বিষয়টি আমি উপস্থাপন করতে চাচ্ছি তা হলো সম্প্রতি মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা নিষিদ্ধ। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা নিষিদ্ধ করায় একদিকে যেমন সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমেছে পাশাপাশি বেড়েছে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ। বর্তমানে মহাসড়গুলোতে অল্প দূরত্ব অতিক্রম করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বড় বড় যে বাসগুলো আছে তারা লোকাল যাত্রী তুলতে নারাজ আর যদিও তুলে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়। যাক এবার আমি আসল কথায়। সিএনজি অটোরিক্সা যদিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবুও রাস্তায় বের হলে মহাসড়কগুলো যে একশ ভাগ সিএনজি অটোরিক্সা মুক্ত হয়নি তার চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ে। বিশেষ করে রাতের বেলায় মহাসড়কগুলোতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে এই যানবাহনগুলো। মাঝে মাঝে দেখা যায় মহাসড়কে টহলরত হাইওয়ে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বেপরোয়াভাবে সিএনজি অটোরিক্সা চালাচ্ছে চালকরা।
বর্তমান সময়ে মহাসড়কগুলোতে লোকাল যাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব পালন করছে লেগুনা / পিকআপ। আর যে সমস্ত লেগুনা এই রাস্তাগুলোতে চলছে তার অধিকাংশই ফিটনেস বিহীন। ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভাগীয় শহরগুলোতে চালিয়ে যে প্রাইভেট গাড়ি ও লেগুনাগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তা সস্তা দামে কিনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চালাচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকরা। আর এদের থেকে সুবিধা ভোগ করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমীক সংঘঠনের নেতা কর্মীরা। লেগুনাগুলো কিভাবে চলছে তার কি কেউ খোঁজ খবর রাখে? প্রাথমিক অবস্থায় তো বলা যায় কেউ খোঁজ খবর রাখেনা। বর্তমানে মহাসড়কগুলোতে শত শত লেগুনা / পিক আপ ভ্যান দেখা যায় যারা যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এতের যাত্রী সেবার মান দেখলে মনে হয় এদের ভেতরে বিন্দু পরিমাণ মনুষ্যত্ববোধও নেই। যাত্রীদের সাথে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করছে। কোন কোন সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে যাত্রীদের গায়ে এরা হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। শুক্রবারকে সামনে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বেড়ে যায় তাদের ভাড়া। কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি যেতে মিল কারখানার শ্রমীকদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া কারণ বড় বাসগুলোতে লোকাল যাত্রী উঠায় না। যদিও উঠায় গাড়ীতে উঠার আগেই তিনগুন বেশী ভাড়ার কথা বলে দেয় যাত্রীদের। আর শুক্রবার তো কথাই নেই, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই যেতে হয় যাত্রীদের। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ নেই বরং কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকেই অন্য যাত্রীরা অপমান অপদস্ত করে গাড়ীর ড্রাইভার হেলপারদের সাথে মিলে। এই অবস্থা বর্তমানে প্রায় সব মহাসড়কগুলোতেই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এই মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করে থাকে। লোকাল যে পরিবহনগুলো চলাচল করে তার অধিকাংশই ফিটনেস বিহীন। কর্তৃপক্ষ যেন দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন কিভাবে করা যায় তা নিয়ে তাদের যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই। এই তো গেল যাত্রী সেবা এবার আসি সড়ক দূর্ঘটনা প্রসঙ্গে। বর্তমানে সিএনজি অটোরিক্সাকে এক তরফা ভাবে দূর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেন আমাদের সড়ক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবাইদুল কাদের। সিএনজি অটোরিক্সার পাশাপাশি যে লেগুনা / পিকআপ দায়ী সেটা কিন্তু তিনি জোর গলায় বলেন নি। যার কারনে এই বিষয়টি একটু বলতে চাই। বর্তমানে মহাসড়কগুলোতে যে লেগুনা ও পিকআপ ভ্যানগুলো চলছে তার কতটি বৈধ কাগজ পত্র নিয়ে চলাচল করছে সে সাথে যারা এই যানবাহনগুলো চালাচ্ছে তাদের কত জনেরই বা ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে? সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করতে হলে আমার মনে হয় এই বিষয়ের দিকে সরকারের একটু বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন সে সাথে কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহন করা। শুধু আইন করলেই চলবে না আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তার দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। মহাসড়কগুলোতে যে লেগুনাগুলো চলছে তার অধিকাংশ চালকদের বয়স পনের বছরের নিচে। এদের না আছে প্রশিক্ষণ না আছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। কয়েকদিন একটি লেগুনায় হেলপারি করে গাড়ির স্টেয়ারিং ধরতে পারলেই ওস্তাদ বনে যায় এরা। আর চোখ বন্ধ করে কিছু অর্থলোভী গাড়ীর মালিক এদের হাতে গাড়ীর চাবি তুলে দিচ্ছে। এই লেগুনাগুলো মহাসড়কগুলোতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। কোন কোন সময় এদেরকে দূর পাল্লার যাত্রীবাহী বাসের সাথে পাল্লা দিতেও দেখা যায়। যাত্রী উঠানো এবং বসানোতেও চলে অনিয়ম। তারা যে সীটে ৪জন বসতে পারে সে সীটে ৫জনকে বসাচ্ছে জোর জবরদস্তি করে। আর পিছনের বাম্পারে কখনো কখনো ৬/৭ জনকেও ঝুলে থাকতে দেখা যায়। নিয়ম নীতি না মানার কারণে প্রতিনিয়ত এই মহাসড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। ছোট ছোট দেড় টনি পিকআপ ভ্যানের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকরা এসব চালাচ্ছে। এতে করে যাত্রীবাহী কিংবা পন্যবাহী বড় বড় যানবাহনগুলো যাত্রী নিয়ে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে হাড়িয়ে যাচ্ছে হাজারো জীবন। পরিশেষে আমি বলতে চাই সরকারের বাধ্যতামূলক কিছু নীতিমালা করা দরকার যা চালকরা মানতে বাধ্য। ফিটনেস বিহীন গাড়ী নিষিদ্ধ এবং লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণ বিহীন চালকদের শাস্তির বিধান কার্যকর করা। এতে করে একদিকে কমে যাবে দূর্ঘটনা অপরদিকে রক্ষা পাবে হাজারো জীবন।
ভাড়া বিরম্ভনার হাত থেকে বাঁচতে প্রতিটি যাত্রী বাহী পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চাট টানানো বাধ্যতামূলক করা ও ভ্রাম্যমান অভিযোগ কেন্দ্র করে দেয়া। যাতে করে যাত্রীরা সার্বিক সহযোগিতা পেতে পারে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের জন্য রাখা দরকার শাস্তির বিধান। সর্বপরি আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদেরকেও হতে হবে সচেতন এবং প্রতিবাদী। জাগাতে হবে আমাদের বিকেক বোধ শক্তিকে, কেননা আর কতদিন আমরা এই সড়ক দূর্ঘটনায় প্রিয়জন হারানোর খবর শুনবো? আর কতদিন ফেলে যাবো চোখের জল?
তারিখ:-২৪-১০-১৫