এক শিক্ষক ১৯ বছর ধরে ক্লাশ নিচ্ছেন নদী সাঁতরে!

ডেস্ক রিপোর্ট : নদী সাঁতরে ১৯ বছর ক্লাশ নেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত গড়লেন এক শিক্ষক । কেবল তাই নয়, এই সুদীর্ঘ সময়ে স্কুলে কোন অনুপস্থিতি নেই তার । এছাড়া ঠিক সময়েই প্রতিদিন তিনি স্কুলে পৌঁছতেন।
ভারতের কেরালা রাজ্যের এ শিক্ষকের নাম এ টি আব্দুল মালিক । ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে ১৯ বছর ধরে প্রতিদিন নদী সাঁতরে পার হয়েছেন তিনি । কেরালার লোকালয়ের লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক যদি সড়কপথে স্কুলে যেতেন তবে দুবার বাস বদল করতে হতো। তারপর দুই কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হতো। আর এতে সময় নষ্ট হতো ঘন্টা তিনেক।
এমন বিদঘুটে পথ ছেড়ে তিনি স্কুলে যাওয়ার শটকার্ট পথটিই বেছে নিলেন। এতে বাড়ি থেকে ১০ মিনিটে নদীর পাড় যেতেন, এরপর নদী সাঁতরে তীরে উঠে হাঁটতেন মিনিট তিনেক। পৌঁছে যেতেন স্কুলে। আর এ পথটিই হয়ে ওঠে স্কুলে আসা-যাওয়ার একমাত্র পথ। তাই বলে কোনদিন স্কুলে আসা-যাওয়ায় ছেদ ঘটেনি তার।
প্রতিদিনের দৃশ্যটি ছিল এ রকম- নদীর তীরে পৌঁছে তিনি তার পোশাক এবং অন্যান্য জিনিষপত্র প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরিয়ে ফেলেন। চোখে পানিরোধক চশমা পরে প্লাষ্টিকের সেই ব্যাগ এক হাতে পানির ওপরে ধরে পারি দেন নদী। স্থানীয়দের কাছে এই শিক্ষক পরিচিতি পেয়েছেন জীবন্ত ঘড়ি হিসেবে। তিনি যখন প্রতিদিন পানিতে নামেন তখন ঘড়ির কাটা থাকে ঠিক ৯টায়।
এরপর নদীর তীরে ওঠে কাপড় পড়ে পৌঁছান স্কুলে। সেখানে হাসিমুখে অপেক্ষায় থাকে তার শিক্ষার্থীরা। মাসিক বেতন যা পান তাতেই খুশি এই শিক্ষক।
আব্দুল মালিক মনে করেন, পরিবেশ ও নদীরক্ষায় তার এই কাজ অনেককেই উৎসাহ যোগাবে। এছাড়া তিনি মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের নিয়েও সাঁতার কাটতে বের হন। এর মাধ্যমে নিজেকেও ফিট রাখা যায় বলেও জানান এই শিক্ষক।
তার এই কর্মের স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তাকে সম্মাননা দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের একজন মানসিক চিকিৎসক মহান এই ত্যাগের জন্য একটি নৌকা উপহার দেন। এর আগেই কেটে গেছে ১৯ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি নদী সাঁতরেই ইংলিশ চ্যানেলের সমপরিমাণ (৭০০ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করেছেন ।