গল্পসাহিত্য সাধনা

একজন ব্যাচেলর পিতার সপ্ন পূরণের গল্প


————– এম এ মালেক খান উজ্জল


খুব অল্প বয়সে মা হারানোর শোক সইতে না পারার কারনেই আমি আমার পিতার অবাধ্য সন্তানের খ্যাতি অর্জনের মাধ্যমে ৭ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৮৬ সনে বাড়ি থেকে একটি ইংলিশ প্যান্ট ও সাদা রংয়ের একটি হাফ সার্ট পড়া অবস্থায়,পিত্তাস গাছের বিচি বিক্রির দেড় টাকা, দুচোখ দিয়ে বিরামহীন ভাবে ঝড়া জল ও মূত্যু যন্ত্রনা ছটফট করাবস্থায় আমার মায়ের দেয়া আর্শিবাদকে পুজি করে অজানার উদ্যেশে বেড়িয়ে আসি। তার পর থেকে ১৯৯২সন পর্যন্ত আমার জীবনে ঘটা নির্মম বাস্তবতার কথা উল্লেখ করলাম না। কারণ, তাহলে আমার প্রায় পাঁচ হাজার ফেসবুক বন্ধু বিরক্ত হয়ে আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিবে। যাক সে কথা, ৯২ সনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের পর একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রথম দুটি বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার পর কলেজে আসা সম্ভব হয়নি।
তৎকালিন ছাত্রদলের নেতা আমির হোসেন ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের নেতা বিপ্লব ভাইদের মাঝে কলেজে মারামারির একটি ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়াও তৎকালিন সার কেলেংকারীর ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। সে সময়ে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কোন কোন মামলায় আমিও জড়িয়ে পড়ি। ৯৩ সনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করি। শেষ পরীক্ষা মনোবিজ্ঞানের দিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২০ মিনিট পুর্বে হঠাৎ রুমে পুলিশ আমার নামধরে খুজতে থাকে। অপরিচিত চেহারা ও শ্রদ্ধেয় স্যার, অধ্যাপক মতিউর রহমান মোহন ও সারোয়ার স্যারের সহায়তায় গ্রীল বিহীন জানালা দিয়ে পালাতে সক্ষম হই। চলে যাই ঢাকার উত্তরায় । সে থেকে একাধারে ৯৬ সনের ১৪ জুন ভালুকায় ফিরি। প্রায় চার বছর উত্তরার আজমপুরে কাটানোর সময় রাজউক উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পাই। সে থেকেই মনে মনে ভাবতাম, আমি যদি কোনদিন বিয়ে করি ও আমার যদি কোন সন্তান হয় এবং সৃষ্টিকর্তা যদি এ প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়ার সুযোগ দিত,তাহলে আমার জীবন সার্থক হতো।
মহান সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায়, ৯৭ সনের ১৩ আগষ্ট আমি বিয়ে করি,৯৯ সনের ডিসেম্বরে আমার ঘরে একটি কন্যা সন্তান আসেন। নাম তার মহিমা খান পিয়া। সে প্রাথমিক সমাপনীতে উপজেলার ৪র্থ স্থান,জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও ২০১৬ সনে এসএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়ে মেধা তালিকায় ওই যে,বিয়ের কয়েক বছর পুর্বেই আমার যদি কোন সন্তান হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তা যেন এ প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়ার সুযোগ দেন। ব্যাচেলর পিতার যে সপ্ন ছিল. মহান সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপাায়, প্রায় দুই যুগ পুর্বের দেখা সপ্ন আজ ২৬ জুন-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে বাস্তবে রুপ নিয়েছে। আজ আমি আমার মেয়ে মহিমা খান পিয়াকে সেই “রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজে” ভর্তি করতে সক্ষম হয়েছি।
আমি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ। আপনারা সকলেই আমার একমাত্র মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন আমার মতো আমার মেয়ের ইচ্ছেও পূরণ করেন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button