ট্রেড লাইসেন্স করার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য

ভালুকা নিউজ ডট কম; ডেস্ক: ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স নেয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপাত্ত জানেন না। বৈধভাবে যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক। সাধারণত সিটি করপোরেশন ও মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা বা জেলা পরিষদ এই লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করা যাবেনা। পাঠকদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হল:
আবেদনের পদক্ষেপ:
১. অঞ্চল নির্বাচন
ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) তার নাগরিকদের সেবা দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনকে কতগুলো অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, ওই অঞ্চলের অফিস থেকেই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
২. ফরম সংগ্রহ
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সিটি করপোরেশনের দুই ধরনের ফরম রয়েছে। আপনি যে ধরনের ব্যবসা করছেন বা করতে ইচ্ছুক, তার ওপর ভিত্তি করে ফরম নেবেন। ফরম মূল্য- ১০ টাকা। ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ছবি জমা দিয়ে মূল ট্রেড লাইসেন্স বই সংগ্রহ করতে হবে।
৩. সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ ফরম দাখিল
ট্রেড লাইসেন্স এর ফরম সংগ্রহ করে নিম্নোক্ত কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।
ক) জাতীয় পরিচয়পত্র (প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত)।
খ) যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গার মালিক হন, তাহলে দলিল, নামজারী, খাজনা রশিদ।
গ) যদি ভাড়াটিয়া হন, তাহলে ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র।
ঘ) সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
ঙ) পত্রিকা/প্রেসের ক্ষেত্রে, ১৫০/- টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে ঘোষণাপত্র।
চ) কোম্পানীর ক্ষেত্রে, সত্যায়িত মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন।
ছ) অংশীদারিত্ব ব্যবসার ক্ষেত্রে, অংশীদারিত্ব চুক্তিপত্র।
জ) বিদেশী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে ওয়ার্ক পারমিট এর কপি।
ঝ) কোম্পানীর ক্ষেত্রে, ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট (ব্যাংক দলিল)।
ঞ) টিন সার্টিফিকেট।
ট) শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ওপরের সব দলিলের সঙ্গে পরিবেশসংক্রান্ত অনাপত্তিপত্র, প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র ও অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতিসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে।
ঠ) ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন।
ড) ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি গ্রহণ।
ঢ) রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স এর কপি।
ণ) অস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স এর কপি।
ত) ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষেত্রে সিভিল এ্যাভিয়েশনের অনুমতিপত্র।
থ) সিএনজি স্টেশন বা দাহ্য পদার্থের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর বা ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পরবর্তী দায়িত্ব :
সিটি করপোরেশনের দ্বারা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদন্ত হতে পারে এবং এর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাইসেন্স ফি পরিশোধের মাধ্যমে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
লাইসেন্স ফি এর পরিমাণ:
লাইসেন্স ফি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০,০০০/- পর্যন্ত হতে পারে। লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে, লাইসেন্স ফি পরিশোধিত মূলধনের (Paid up Capital) উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। এই ফি সংশ্লিষ্ট অফিসে রসিদের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্স ফির নতুন তালিকা বাংলাদেশ সরকার ২রা মার্চ, ২০১৫ ইং তারিখে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশিত করেছে।
লাইসেন্স নবায়ন করবেন যেভাবে:
লাইসেন্স নবায়ন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। একটি লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর এবং এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ জন্য আগের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর কর্মকর্তা নবায়নকৃত লাইসেন্স প্রদান করবেন। লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্স ফির সমান। এই ফি আগের মতোই ফরমে উল্লিখিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে। তবে, লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাগজপত্র দাখিলের প্রয়োজন হয়-
ক) লাইসেন্স বই
খ) চালান ফরম
গ) মালিকানার প্রমাণপত্র
ঘ) টিন সার্টিফিকেট
কত দিন লাগে :
একটি লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। তবে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী সময় বেশী লাগতে পারে।
যে কারণে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে:
মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে, লাইসেন্সে উল্লিখিত শর্তাবলি এবং সিটি করপোরেশনের আইন ও বিধি মেনে না চললে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এ ছাড়া লাইসেন্স গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে গ্রহীতাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে।