অর্থনীতি

গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য ডিসিসিআই’র অনুরোধ

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই),দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখার স্বার্থেই বিদ্যমান গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১জুলাই) এক বিবৃতিতে ডিসিসিআই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনারও আহবান জানিয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়,গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে ডিসিসিআই মনে করে, সরকার বিশ্ব বাজারে তেলের হ্রাসকৃত মূল্যের সুযোগ গ্রহণ করে তেল আমদানির মাধ্যমে জ্বালানির অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পারে।

সম্প্রতি গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলো গ্যাসের মূল্য গড়ে ৮৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের ১৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৬২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে।

এ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪১ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে ৭১ শতাংশ, যার ফলে কৃষি খাতের পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে রয়েছে বলে ডিসিসিআই’র বিবৃতিতে জানানো হয়।

ডিসিসিআই মনে করে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ব্যবসায় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি দুই ডিজিটে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।ঢাকা চেম্বার মনে করে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির নানামুখী কর্মকা- মেটানোর জন্য শিল্প-কারখানাসমূহে পর্যাপ্ত পরিমানে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি, তদুপরি সার্বিকভাবে এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় ব্যয় আরোও বাড়বে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাকে গতিশীল রাখার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এ দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে টেক্সটাইল, তৈরী পোশাকসহ অন্যান্য খাতসমূহ ইতোমধ্যে প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছে, তথাপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে এ খাতগুলোর অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ডিসিসিআই মনে করে।

ঢাকা চেম্বারের বিবৃতিতে বলা হয়,গ্যাসের মূল্য পুনরায় বৃদ্ধি করা হলে তৈরী পোশাক খাত এবং অন্যান্য আমদানিকৃত পণ্য এবং রপ্তানি নির্ভর শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রতিযোগী সক্ষমতাও হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সম্ভাবনাও কমে আসবে। বাণিজ্যিক পরিবহন খাতে এর প্রভাব পড়ার কারণে ব্যবসায় ব্যয় বৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে (সাপ্লাই চেইন) ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তাশ্রেণীর উপর গিয়ে পড়বে। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি অনৈতিকভাবে অপব্যবহারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সার্বিকভাবে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরী হতে পারে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এছাড়াও শিল্পায়ন, ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফিতির উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বর্তমান সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ঢাকা চেম্বার প্রণীত ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button