জাতীয়

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিদের সভাপতি পদ বাতিল: হাইকোর্টের রায় প্রকাশ

ভালুকা নিউজ ডট কম; ঢাকা: দেশের সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের (এমপি) সভাপতি পদের থাকার নিয়ম বাতিল করে বাতিল করে দেয়া রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ছাড়া বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল সেসব কমিটিও বাতিল করেছেন আদালত।

রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচন দিতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করতে আইন সচিব, শিক্ষা সচিব ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৩১ জুলাই) বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চের এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জানান রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

সকল ধরনের আইন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫ (১), (২) অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের অধিকার সংক্রান্ত ধারা ও বিশেষ কমিটি সংক্রান্ত ৫০ ধারা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ (এবসলিউট) ঘোষণা করে সেই বিধান সংশোধনপূর্বক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের বিধান সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে এবং অবিলম্বে তা কার্যকর হবে। সকল ধরনের শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই রায় প্রযোজ্য হবে।
রায়ে আদালত ভিকারুন্নিছা নুন স্কুল ও কলেজের সভাপতি রাশেদ খান মেননের ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের বিশেষ কমিটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এছাড়া ওই নীতিমালার ৫০ ধারা অনুযায়ী যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কমিটি আছে তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। ফলে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৫ সালের ১ জুন এই রায় ঘোষণার দিন থেকে কোনো বিশেষ কমিটি নেই।
রাশেদ খান মেননের আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজের বিশেষ কমিটিতে থাকাও রায় অনুযায়ী অবৈধ হবে।

বাংলাদেশের যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা ৫ (১), (২) ধারা অনুযায়ী তাদের সভাপতি পদ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে ১ জুন থেকে সংসদ সদস্যরা সভাপতি নেই।
রায়ের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর ও কার্যকর করার নিমিত্তে (যেসব প্রতিষ্ঠানে এমপিরা সভাপতি আছেন) ৩০ দিনের মধ্যে রেগুলেশন অনুযায়ী সভাপতি নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্যান্য সকল শিক্ষা বোর্ড যেমন- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, মাদ্রাসা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ একই ধরনের অন্যান্য আইনের ৫ (১), (২) ধারা সহ একই সমপর্যায়ের অন্যান্য রেগুলেশন বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া সকল স্তরে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান তৈরির জন্য শিক্ষা সচিব ও ঢাকা বোর্ডকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫ ধারায় আছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ৪টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে থাকতে পারবেন। আর ৫০ ধারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচন না দিয়ে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে গঠনের বিষয়টি রয়েছে।

এ দুটি ধারা সংবিধানের ৭, ২৬, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৬৫-এর সংঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে তা বাতিল চেয়ে অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত চলতি বছর ১৩ এপ্রিল রুল জারি করেন।

রুলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচন ছাড়া কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চান হাইকোর্ট।
গত ১ জুন এই মামলার রায়ে আদালত সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল করেন। যার পূর্ণাঙ্গ রায় এবার প্রকাশিত হলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button