লাভজনক দেশী ছাগল পালন

ভালুকার নারীরা দেশী ছাগল পালন করে এখন স্বাবলম্বী।এক সময় অন্যের বাড়ী কাজ করে সারাদিন গতর খাটিয়েও সংসার চলতোনা যাদের,তারা আজ ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী।নিজের পায়ে দাড়িয়ে আজ লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখেন ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের অনেক নারী।এই ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল পালন করে তারা আজ কেউ নিজের সন্তানকে স্কুল-কলেজ কেউবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন আবার সংসারের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও অবদান রেখে চলছেন এসব দরিদ্র পরিবারের নারীরা।সরেজমিনে দেখা যায় পাড়াগাঁও গ্রামের গতিয়ার বাজারের উত্তর পার্শ্বের পাচঁপাই এলাকার উন্মুক্ত ভুমিতে দেশী ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে।আবার কেউবা বাড়ীর আঙিনায় মাচা তেরী করে স্থায়ীভাবে নিদিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ করে ছাগল পালনে ব্যাস্ত। তারা খাবার হিসেবে জমির ঘাস,কাঠালের পাতা,ভাতের মাড় কেউবা কুড়া-ভূষি দিয়ে ছাগলের খাবারের আয়োজন করছেন।ওই গ্রামের প্রায় প্রতিটা বাড়ীতেই ৫,১০,২০ বা তার অধীক ছাগল পালন করছেন ব্যাক্তি উদ্যোগে।কেউ কেউ ওয়ার্ল্ড ভিশন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীতায় প্রশিক্ষন গ্রহন করে ছাগল পালনে উদ্ভুদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।কথা হয় ছাগল খামারি ও কফিল উদ্দিনের স্ত্রী রীনা আক্তারের সাথে।তিনি তখনও ছাগল,গরু ও মুরগী নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। ওয়ার্ল্ড ভিশন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীতায় প্রশিক্ষন গ্রহন করে তিনি ১০০০ হাজার টাকা মুলধন নিয়ে ছাগল পালন করে গত ৫বছরে সারে ৩ লক্ষ টাকা আয় করেছেন-ছাগল ও সাথে গরু পালন করে।খাবার হিসেবে তিনি প্রাকৃতিক ঘাস ও খড়ের উপর নির্ভরশীল।রিনা আক্তার এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন-তার ২ছেলে ও ২মেয়ের মধ্যে একমেয়ে ডিগ্রি ক্লাসে,অন্যরা যথাক্রমে সপ্তম শ্রেণী ও তৃতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। অন্যজনকে অটো কিনেছেন তা চালায়।
রীনা বলেন-এক সময় মানুষের বাড়ীতে কামলা দিয়ে সংসার চালাতেন,তারপরও ছিল অভাব অনটন।অথচ এখন গবাদি পশু পালনে সে স্বাবলম্বী।তার বাড়ী-ভিটাসহ বিশ শতকের মত জায়গা রয়েছে। ছাগল ছাড়াও তার মিনি খামারে রয়েছে ৮টি ছোট-বড় গরু,মুরগী রয়েছে ২০/২৫টা।ছাগল খামারী রুজিনা তার বাড়ীতে ছাগলে সাথে কবুতর,মুরগী খরগোশ পালন করেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা পেয়েছেন বলে জানান।
এনজিও ও ব্যাক্তিগত ব্যাবস্থাপনায় ছাগলের রোগ বালাই(পিপিআর)এর চিকিৎসা দেয়া হয়।সরকারীভাবে তারা ছাগল পালনে আর্থিক বা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা বলেও জানান।উপজেলা প্রাণী স¤পদ কর্মকর্তা ডা: হেলাল আহম্মেদ জানান-ওয়ার্ল্ডভিশনের সাথে আমরা সহযোগীতা করি,ভ্যাকসিনেশন কার্যাক্রম পরিচালনা করে থাকি।তিনি আরো বলেন-ভালুকাতে প্রায় ১৪০ জন ছোট খামারি থাকলেও প্রায় বাড়ীতেই ছাগল পালন করা হয় এবং ছাগলের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার হবে।সবচেয়ে বেশী ছাগল পালন করা হয় পাড়াগাঁও ডাকাতিয়া এলাকায় এবং কেউ ছাগল পালন করতে আগ্রহী হলে উপজেলা প্রাণী স¤পদ অফিস থেকে সহযোগীতা করা হবে।
পাড়াগাঁও পাঁচপাই গ্রামের আরো যারা ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেও অনুরুপ অভিব্যাক্তি পাওয়া যায়।এদের মধ্যে-রীতা,উষা রানী,রুজিনা আক্তার,রাশিদা বেগম,লীজা,সুফিয়া খাতুন,বকুল বেগমসহ প্রায় ১শত জন মিনি ছাগল খামারি ওই এলাকা ছাড়াও হবিরবাড়ী ইউনিয়নের গাংগাটিয়া,শিরিরচালা,বড়চালা,পাড়াগাঁও,কাচিনা,ইউনিয়ন,মল্লিকবাড়ী,ডাকাতিয়া,ভালুকা ইউনিয়ন ও ভালুকা পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগীতায় ছাগল পালন কার্যক্রম চলছে।এছাড়াও একটু বড় খামারি হিসেবে ভালুকার কলাবাগান এলাকার আকতারুজ্জামান এর খামারে ৭০/৮০টি,রাংচাপড়া গ্রামের আ: কাইয়ুম,জামিরদিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর,২এস ফিড সুর্যভিটায় একটু বড় আকারে ছাগলের খামার করে খামারিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলার প্রায় সকল গ্রামের নারীরা ছাগল পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহের কাজে নিয়োজিত।ওয়ার্ডভিশনের (এএফ)মোন্তাজ উদ্দিন এসবের দেখাশোনা করেন।কথা হয় তার সাথেও।তিনি বলেন এসব দরিদ্র নারীদের আমরা প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি,যদি সরকারীভাবে আর্থিক সহায়তা বা ব্যাংক ঋণ দেয়া যেতো তবে তারা আরো আথির্ক লাভবান হতে পারতেন।আমরা চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে এসব নারীরা দারিদ্রতা দুর করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।এ সময় ওই এলাকার যুবক কাউছার আহম্মেদ ছাগল খামারীদের বাড়ী ঘুরিয়ে দেখান।ভালুকায় সৌখিন ছাগল পালন করেন এমন ব্যাক্তিরা তিরোহি,পাকিস্তানি জাতের ছাগল পালন করলেও ব্ল্যাকবেঙ্গল দেশী ছাগলই মুলত পালন করা হয় বলে সংশ্লীষ্ট সুত্রে জানা যায়।
ভালুকা পশু স¤পদ অফিস সুত্রে জানা যায়-২০০৪ সালের ৩মে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ৬৫জন নারী ও ৫১জন পুরুষকে মোট ৬লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।এবং ছোটবড় খামারীদের ছাগলের সংখ্যা ৬হাজার ১শত ৭৪টি।এদিকে গত ২২মে বাংলাদেশ র্প্রাণী স¤পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভালুকায় ২২টি উন্নতজাতের পাঠা বিতরণ করা হয়। উপজেলা পশু স¤পদ অফিস থেকে যথাসাধ্য চেষ্ঠা চালিয়ে গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান ডা: হেলাল আহম্মেদ।
সরকারী উদ্যোগ,সহযোগীতা,ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ঋণ ও এনজিও সংস্থার সার্বিক সহযোগীতা ছাগল পালনে উৎসাহী ও খামারিদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বলে বিজ্ঞমহলের মত। সরকারী সহযোগীতা পাওয়ার জোর দাবী ছোট-বড় ছাগল খামারিদের।