ধর্ম

ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদ-উল আযহা-সফিউল্লাহ আনসারী

মহান ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের দ্বারে আবারো হাজির পবিত্র ঈদ-উল আযহা।আল্লাহ তার বান্দাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করেন তার স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য।ঈদ মুসলমানের আনন্দ উৎসবের সাথেই ইবাদতের তাৎপর্যকে সমুন্নত করে।বিশ্ব মুসলমানের সার্বজনীন আনন্দ উৎসব হিসেবে দুটো ঈদই গুরুত্বপুর্ণ।ঈদ-উল আযহায় পশু কোরবানীর মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তা বান্দার আত্মত্যাগ ও বনের নয় মনের পশুকে কোরবানী করার জন্য মহা নিয়ামত হিসেবে দান করেছেন।মুসলমানে সবচেয়ে বড় উৎসব এই ঈদকে ঈদ-উল আযহা,কোরবানীর ঈদ,বকরা ঈদ প্রভূতি নামে আমাদের কাছে পরিচিত।প্রতি বছর যিলহজ্জ মাসে পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান ইবরাহীম (আঃ)এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদীনায় উপস্থিহ হন।হ্জ্জ পালন করেন,কোরবানী করেন,হযরত ইব্রাহীম (আ:)এর আদর্শকে ধারন করে নিজেকে পরিতৃপ্ত করেন একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্যেশ্যে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য,সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে বিশ্বের দরবারে পৌছে দিতেই হজ্জ,ইবাদত হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ।গ্রাম-গঞ্জ-শহরে সর্বত্রই আনন্দ উৎসবে ধনী-দরিদ্র,রাজা-প্রজা সকলেই ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় শেষে কুরবানী করে কুরবানীর গোশত গরীব-দুঃখী,আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিতরণ করে এক অনন্য ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তরিকতার পরিচয় দেয়,যা সত্যি মহান ত্যাগের শিক্ষারই বাস্তবায়ন।পবিত্র হজ্জ এবং কোরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ কুরআনের সুরা হজ্জের ৩৬নম্বর আয়াতে কোরবানীর বিষয়ে বলেন-‘আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি।এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ’।সুরা কাওছারে আল্লাহ বলেন-‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’।পবিত্র ঈদ-উল আযহার গুরুত্ব এভাবেই পবিত্র কোরআন শরীফে বর্নিত হয়েছে।হাদিস শরীফে রসুল (সা:)বলেছেন-‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না,সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’।মানবজাতীর আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র কাবীল ও হাবীলের দেওয়া কুরবানী থেকেই কুরবানীর প্র্র্রথা চালু হলেও আমরা যে কোরবানী করছি তা হযরত ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক তাঁর শিশু পুত্র ইসমাঈল (আঃ)কে আল্লাহর উদ্যেশ্যে কোরবানী দেওয়ার অনুসরণেই নির্ধারিত হয়েছে। কোরবানীর মাধ্যমে‘নৈকট্য’লাভ করাকেই বুঝায় এবং যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় তাকেই কোরবানী বলা হয়।এই পশু কোরবানীর দ্বারা আমরা প্রিয় প্রানীর কোরবানী করলেও হযরত ইব্র্রাহীম (আ:)কে তার প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানী করতে ছিলেন।কিন্ত আল্লাহ কুদরতে দুম্বা যবেহ হয়।এখানে রয়েছে ধর্মীয় মুল্যবোধকে সমুন্নত করার মহান শিক্ষা।আল্লাহর জন্য,তার সৃষ্টির জন্য,মানবতার জন্য ত্যাগের শিক্ষা দিয়ে যায় এই পবিত্র ঈদ-উল আযহা।কোরবানীর মাধ্যমে বান্দা শুধু মাংস ভক্ষন আর আনন্দে মেতে উঠার জন্য নয়,কোরবানী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।কোরআনে পাকে আল্লাহ এ বিষয়ে সুরা হজ্জে স্পষ্ট বলেছেন-‘কুরবানীর পশুর রক্ত,গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না,পৌঁছে কেবল তোমাদের তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি’।আমাদের উচিত লোক দেখানো ইবাদত থেকে মুক্ত হয়ে কেবল আল্লাহর জন্যেই কোরবানী করা।কোরবানীর ঈদ বা ঈদ-উল আযহা কেবল আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়,এটি আত্মত্যাগ,আত্মোৎসর্গ,আত্মসমর্পণের দিন।ঈদ-উল আযহা দিবসের এই কোরবানী পার্থিব লোভ-লালসা,স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে মহান স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।সত্যের পক্ষে,মানবতার কল্যানে,দেশ-জাতীর স্বার্থে আত্মোৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়।কুরবানীর স্বার্থকতা ভোগে নয় ত্যাগে।ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ,পরনিন্দা,পরশ্রীকাতরতা, আত্মঅহংকার,কৃপণতা,স্বার্থের লোভে জঘণ্য পশুসুলভ আচরণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে সিরাতাল মুস্তাকীম বা সহজ সরল পথে পরিচালিত হবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাওয়া।আমাদের সকল কিছুতেই গরীব-দু:খীর হক রয়েছে তাই আমাদের উচিত তাদের পাশে থেকে আনন্দকে ভাগ করে নেয়া।শুধু চামড়ার টাকা নয়,সব ধরনের সহযোগীতায় গরীব-অসহায়ের পাশে দাড়ানো।জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানবতার কল্যাণে নিজেকে সপেঁ দিয়ে হিংসা মুক্ত সৎ ও আদর্শ সমাজ গঠনে অবদান রাখা।কোরবানীর স্বার্থকতা খোঁজতে বিভেদহীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধকে সংহত করা জরুরী যাতে বিশ্বে সহিংসতার বদলে শুধু শান্তি আর স্বস্থিতে ভরপুর থাকে। ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে আসা পবিত্র ঈদ-উল আযহার মূল্যবোধকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে আমরা মানবতার কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিই স্বার্থহীন-সত্য ও ন্যায়ের পথে।ঈদ হোক ত্যাগের-আনন্দের-সকলের এই প্রত্যাশা এবং অবিরাম শুভ কামনা করছি।

#

সফিউল্লাহ আনসারী

সম্পাদক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button