মহাসড়কে ম্লান ঈদ আনন্দ যাত্রা

অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘ যানজট, নৌপথের বিড়ম্বনায় ঘরমুখো মানুষের ঈদ আনন্দযাত্রা ম্লান হতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের ভোগান্তির খবর জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা। এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়েন নাড়ির টানে ফেরা মানুষেরা।
গাবতলী বাস টার্মিনালে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল বাড়ি ফেরা যাত্রীদের চাপ। নগরের কর্মব্যস্ততা থেকে একটু মুক্তি পেতে বাবা-মা ও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটছেন গ্রামে-গঞ্জে। কিন্তু টার্মিনালে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনেকের।
যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না গাড়ি। এমনকি সময় মতো গাড়িরও দেখা মিলছে না। দীর্ঘক্ষণ নারী ও শিশুসহ সবাইকে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কেউ একা কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অথবা বন্ধুরা দলবল নিয়ে ব্যাগ হাতে কাউন্টারের আশপাশে বসে আছেন। সবার একই উদ্দেশ্য নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।
একই চিত্র সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। শুক্রবার ভোর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের মানুষেরা নদীপথে ঘরে ফেরার জন্য সদরঘাট টার্মিনালে ভিড় করতে শুরু করেন।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বরিশাল যাত্রী রবিউল হক বলেন, সকাল ৭ টায় এসেছি সদর ঘাটে। তারপরও লঞ্চের সিট পাইনি। তাই কাপড় বিছিয়েই লঞ্চের ডেকে বসে পড়লাম। কিছুই করার নাই, বাড়ি যেতে হবে।
বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহকরী পরিচালক মো. নাদিরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার যাত্রীদের ভিড় একটু বেশি। তবে টার্মিনালে যাত্রীদের দুর্ভোগ নেই। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যাতে ঈদে ঘরমুখো মানুষ কোনো সমস্যায় না পড়ে।
এদিকে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত আর ভাঙনের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের অচলাবস্থা এখনো কাটেনি।
শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় ছোট, বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় দেখা যায়।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, পাটুরিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় বাসসহ অন্তত ৫ শতাধিক যানবাহন পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস ও ব্যক্তিগত ও ভাড়াকরা গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফেরি আসার সাথে সাথে আটকে থাকা গাড়ির চাপ কমে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা ঘাট শাখার ডিজিএম শেখ মুহাম্মদ নাসিম চৌধুরি জানান, নদীতে স্রোত থাকায় ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগছে।
ধীরগতিতে ফেরি চলাচলের কারণে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ৭ কি.মি সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। এতে বাসযাত্রী ও গরুবাহী ট্রাক ও গরুর ব্যাপারিরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডাব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ রুটে ছোট বড় ১৫/১৬টি ফেরি চলাচল করছে। কিন্তু ২নং ঘাটে প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটেও ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল দেখা গেছে। প্রিয়জনের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে এসব মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ফেরি, লঞ্চ, সিবোটে রওনা দিচ্ছেন গ্রামের পথে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। গাজীপুর মহাসড়কের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের গোড়াই পর্যন্ত এ যানজট ৩৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
থমকে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে পড়ে আছে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গজারিয়া হয়ে মেঘনা ব্রিজ থেকে শুরু করে কুমিল্লা গৌরীপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং এলোপাতাড়ি যানবাহন চলাচলের কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ।
বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে মহাসড়কের সানারপাড়, মুগদাপাড়া, ভবের চর, গজারিয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছেন। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যাতায়াতের ২ ঘন্টার সময়ের পরিবর্তে ৬/৭ ঘণ্টা সময় লাগছে বলে যাত্রী ও চালকরা জানিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার ভোর থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশ চাপ সামলাতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।