প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেয়ে হত্যার বিচার চান তনুর মা
কুমিল্লা প্রতিনিধি: ‘আমার তনু কি বাংলাদেশের না? সে কি বিচার পাবে না? আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, এখন উল্টো আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে সিআইডি।’ কুমিল্লা পূবালী চত্বরে মঙ্গলবার ‘তনু হত্যার ছয় মাস! বাউল পদযাত্রা ও প্রতিবাদী সমাবেশে’ তনুর মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তনু হত্যার বিচার চান।
তিনি বলেন, ‘তনুর মামলা তদন্ত যিনি করতেন, এখন তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে জালাল উদ্দীন নামে একজনকে দিয়েছে তদন্ত করতে। তিনি এ পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি তনু হত্যার ব্যাপারে। শুধু একবার সেনানিবাসে গিয়েছে তনুকে ফেলে রাখার জায়গা দেখতে।’
তনু হত্যার ছয় মাস পূর্তিতে এ প্রতিবাদী আয়োজনেগণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ছয় মাস পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত মামলার কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। দুই দফা লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা হয়নি। তনুর মা কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম এর আগে সিআইডি ও গণমাধ্যমকে বলেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনের সঙ্গে তনুর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা মেলানো হয়নি। সিআইডির তদন্তের এই দশা আমাদের সবাইকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।’
সমাবেশে তনু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে পূবালী চত্বরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চ, অচিন পাখি, বাউল শিল্পীরা একসাথে জমায়েত হয়। তারা গানে গানে তুলে ধরেন তনু হারানোর বেদনা।
চলতি বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে মুরাদনগর উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই দফায় তদন্তকারী কর্মকর্তা/সংস্থা পরিবর্তন শেষে ৩১ মার্চ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
গত ৪ এপ্রিলে তনুর প্রথম ও ১২ জুন দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে পারেনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররা। প্রথম প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ উল্লেখ করায় তনুর পরিবারসহ দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলেও তদন্ত সংস্থা সিআইডি এখনো মামলার রহস্যের জট খুলতে পারেনি। তবে সিআইডির শেষ ভরসা তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন।
সিআইডির ফরেনিক ল্যাবে তনুর ডিএনএ প্রতিবেদনে ৩ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া গেলেও তা শনাক্ত করতে এখনো সন্দেহভাজনদের ডিএনএ সংগ্রহ করতে আদালতের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এতে তনু হত্যার রহস্য উদঘাটন ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে তনুর পরিবার ও সচেতন মহলের আশঙ্কা।
এদিকে গত ১ এপ্রিল মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর এর তদন্ত তদারকি করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। এর মধ্যে নাজমুল করিম খানকে গত ১১ জুলাই রাজশাহীতে বদলি করা হয়। এরপর তদন্তের গতি আরো বন্ধ হয়ে যায় বলে মনে করছে তনুর পরিবার। আগস্ট মাসে গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম অসুস্থতার কথা বলে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর গত ২৪ আগস্ট নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি জালাল উদ্দীন আহমেদ।