তিন প্রজন্মের করুণ কাহিনী; ভালুকায় ব্রীজের নিচে ১২ বছর

মো. আসাদুজ্জামান সুমন; বিশেষ প্রতিনিধি: তিনজন তিন প্রজন্মের। মা, মেয়ে ও নাতনি। এক যুগের অধিক সময় যাবৎ ভূমিহীন অবস্থায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা খীরু সেতুর নিচে বসবাস করছেন তারা। মা আয়েশা খাতুন (৬৫) ও মেয়ে নাছিমা খাতুন (৪২) ভালুকা বাজারে মাছের আড়তে কাজ করেন। নাতনি শারমিন (১০) তাদের কাজে সাহায্য করে।
সেতুর নিচে থেকেই দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে আয়েশা খাতুন। ১৫ বছরে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্পসহ নানা দুর্যোগ, দুর্ঘটনা সবই ওখানে বসে দেখেছেন তারা। জন্মসূত্রে তাদের বাড়ি ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নে। ওখানে কোনো জমি জমা না থাকায় ১৫ বছর আগে ভালুকা সদরের একটি বাসার বারান্দায় আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন পর বাড়ির মালিক তাড়িয়ে দেয়ায় ভালুকা খীরু সেতুর নিচে বসবাস শুরু করে।
পৌরসভার ভোটার হলেও নাগরিকদের সব সুবিধা থেকে দূরে তাদের বসবাস। কয়েকদিন আগে খীরু নদীর পারে বালু সংরক্ষণ করে নদী ভরাট করার অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় তাদের সন্ধান পান ভালুকা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আখতার। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদারকে অবহিত করা হয়। অফিসে ঢেকে শুনেন তাদের কাহিনী। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদেরকে উপজেলার উথুরা ইউনিয়নে হাতিবের গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর দেয়ার কথা বললে প্রথমে রাজী হয়। কিন্তু সেখানে রোজগারের ব্যবস্থা না থাকায় পরে ওই ঘর নিতে তারা অস্বীকৃতি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আখতার জানান, প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের বাড়ি দেয়ার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে সে প্রকল্পের আওতায় তাদের একটি বাড়ি বরদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দ্রুত প্রেরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এখন থেকে তারা সেতুর নিচে থাকবেনা। তাদের জন্য একটি রুম ভাড়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারা এখন ওই ভাড়া রুমে থাকবে।
বৃদ্ধ আয়েশা খাতুন জানায়, আমারা কোনোদিন এরুম সুবিধা পাইয়াম তা কহনও কল্পনাও করছি না, স্যারে (উএনও) ও মেডামের (এসি ল্যান্ড) হাত দিয়া আল্লাহ আঙ্গরে রহমত করছে।