অর্থনীতি

ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ‘অস্থির চাল-চিনি’র বাজার!

ডেস্ক: উৎপাদন পর্যাপ্ত থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠেছে চাল ও চিনি’র বাজার! প্রতি কেজি চালে আট থেকে দশ টাকা বৃদ্ধি, একই সাথে চিনিতে দশ থেকে পনেরো টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে অল্প আয়ের মানুষেরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। পরিবার নিয়ে খাদ্যের যোগানেই হিমশিম খাচ্ছেন এসব নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই দাম বেড়েছে। একটি সিন্ডিকেট ব্যাপক হারে চাল ও চিনি মজুদ করছে।

রাজধানীর পাইকারি চালের আড়ত বাবু বাজার, কাওরান বাজার সহ খুচরা বাজার গুলোর চাল বেচাকেনার সারেজমিন তথ্যে দেখা যায়, “মিনিকেট ৪২-৪৫ টাকায়, নাজিরশাইল ৫৪-৫৮, পারিজাত ৫০-৫৪ টাকায়, ৪০-৪২ টাকা দরে স্বর্ণা, ৪০-৪১ টাকা দরে বিরি, বাসমতি ও কাটারিভোগ ৭০-৭৫ টাকায়, এবং ৯৫-১০০ টাকা কেজিতে পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে।” এতে দেখা যায়, সব ধরনের চালই কেজিতে ৩ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা দাম বাড়ার জন্য দুষছেন চাতাল ও মিল মালিকদের।

একই সাথে সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম মণপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মাস খানেক আগেও যেখানে প্রতি কেজি চিনি ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, খুচরা বাজারে এখন একই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়!

চিনির পাইকারি বাজার, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। চিনির ব্রোকার আজাদ কবির বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভকে বলেন, ‘গত কয়েকমাস আগে মেঘনা গ্রুপের চিনি মণপ্রতি দুই হাজার ১৮০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় বেচাকেনা হলেও এখন ডিও রেট দুই হাজার ৩২৫ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে গিয়ে দাম পড়ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫১০ টাকা। সিটি গ্রুপের চিনিও একই অবস্থা। যার ফলে কেজি প্রতি পাইকারি পর্যায়েই দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। পাইকারির এ প্রভাবে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি চিনির দাম অনেক বেড়েছে।”

দাম বৃদ্ধির যাঁতাকলে পৃষ্ঠ সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এখন চরমে। তাদের দাবি, যেখানে বাংলাদেশ চাল বিশ্বে অন্যান্য দেশে চাল রপ্তানি করে, সেখানে নিজ দেশেই দাম বৃদ্ধির এই মহড়া ভোক্তাদের ভাবিয়ে তুলছে। তাদের দাবী শীঘ্রই এসব সিন্ডিকেট নামক বাজারের বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলে বাজার স্থিতিশীল করা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, ‘ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি উপ কমিটি (ক্যাব) এর সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ’ এর সাথে। তিনি বলেন, “প্রতিবারই যোগানের স্বল্পতা দেখিয়ে দাম বাড়ানোর মহা আয়োজন চলে। বিষয়টি এখন শুভঙ্করের কর ফাঁকির মত হয়ে গেছে! আমরা সব সময়ই ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু প্রতিবারই দেখিছি সাময়িক কিছু তোড়জোড় হতে।

কিন্তু অসাধুরা ঠিকই পার পেয়ে যায়। আমরা মনে করি বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের বিষয়ে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করবে। একই সাথে কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ করবে।”

প্রসঙ্গত, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। আবার এ বছর লিবিয়াসহ আফ্রিকার ৭টি দেশে বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানির আলাপ-আলোচনা চলছে। অথচ গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button