পাঠক কলামমতামতসম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা নির্যাতন আমাদের বিবেকবোধ

আবুল বাশার শেখ

================

ভূপেন হাজারীকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীত ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে /একটু সহানুভূতি কি? মানুষ কি পেতে পারেনা! ও বন্ধু মানুষ মানুষের জন্যে’। এই সংগীতের সূত্র ধরেই আলোচনা শুরু করি। আমি মানুষ, রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। আমার ভেতরে এক আর বাহিরে আরেক। আমার পাশে যে সে শিশু, নারী কিংবা পুরুষ যাই হউকনা কেন সর্বাগ্রে একটিই পরিচয় সেও মানুষ। কবি বলেছেন- কালো আর ধলু বাহিরে কেবল ভেতরে সবার সমান রাঙা। আজকের সমাজে হউক তা দেশে কিংবা দেশের বাইরে একটি বিষয় কমন হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো বর্ণবাদ। এই বর্ণবাদের কারণে দেশে দেশে দিন দিন মানুষের প্রতি মানুষের সহিংসতা বেড়েই চলছে। তার বাস্তব উদাহরণ বর্তমান সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর বোদ্ধদের অমানবিক নির্যাতন-সহিংসতা। যা দেখলে যে কারও বিবেক নাড়া দেয়ার কথা। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে সেই আগুনে ছোট ছোট শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। ধর্ষণ করা হচ্ছে নারীদের শুধু তাই নয় তাদের হত্যা করে উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে রাখা হচ্ছে। শিশু, নারী ও পুরুষদের নির্যাতনের চিত্র আবার তারা অট্ট হাসিতে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে। এসব অত্যাচারের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে থাকতে অসহায় রোহিঙ্গারা ঝাপিয়ে পড়ছে সাগরে। আপনি যদি একজন রোহিঙ্গার সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেখতে পারেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে একজন রোহিঙ্গা দিনের পর দিন কতটা অসহায় আর নিরুপায় হয়ে সাগরে ভাসছে। যার চোখে বেঁচে থাকার আশার আলোকচ্ছটা বিন্দুমাত্র নেই। বেঁচে থাকার আশা করাও যেন তার মহাপাপ।
রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমার হতে বউ বাচ্চাসহ একটা নৌকাকে জীবন সম্বল করে পরিবার পরিজন নিয়ে সাগরের অথৈই জলে নিরুদ্দেশ্যে যাত্রা করে তখন হয়তো তাদের একটাই আশা থাকে কয়েকটা দিন সাগরের পানিতে ভেসে থেকে অজানা কোন দেশে পাড়ি দিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকতে পারবে। নৌকায় ভাসা রোহিঙ্গারা একটু খাবারের আশায় চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। তাদের কারো মুখে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি। নৌকা ছাড়ার সময় যেটুকু খাবার ছিল তা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অভুক্ত মা তার ছেলের দিকে চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। আর তাকায় সাগরের অথৈই পানি দিকে। পরিবারের কর্তা নিরুপায় সাগরের পানিতে ভাসতে থাকে।

স্বাভাবিক পৃথিবীর কাছে মিয়ানমার এমনিতেই এক রহস্যময় তার নাম। দেশটির রাজনীতি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক বা সামাজিক কোন কিছুর খবরই বাকী বিশ্ব ঠিকভাবে কখনও জানেনি। অর্ধেকেরও বেশী বনভূমি আবৃত বিশাল এই দেশের এক কোনায় আরাকান নামের একটা প্রদেশ আছে যার ভেতর জাতিগতভাবে মুসলিম রোহিঙ্গা নামধারী এ জনগোষ্ঠীর বাস। রোহিঙ্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠী পশ্চিম মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের একটি উলেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মে দীতি। রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও তা অলিখিত। ইউকিপিডিয়া তথ্য মতে ২০১২ সালে, প্রায় ৮,০০,০০০ রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করে। মায়ানমার ছাড়াও ৫ লরে অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এবং প্রায় ৫লাখ সৌদিআরবে বাস করে বলে ধারনা করা হয় যারা বিভিন্ন সময় বার্মা সরকারের নির্যাতনের কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী।
রহস্যময় সে দেশের সবচেয়ে সিক্রেট ইস্যু হলো রোহিঙ্গা মুসলিমদের খবর। প্রতিনিয়ত মৃত্যু আর ধর্ষণের শংকা মাথায় নিয়ে ঘোরা এ জাতির প্রকৃত অত্যাচারিত হবার ইতিহাস বোধহয় তাদের সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই জানেনা। যতটুকু জানা গেছে তাতেই সুস্থ্য মানুষের বিবেকে আঘাত করার জন্য যথেষ্ট। মিয়ানমারে এ রোহিঙ্গাদের কোন নাগরিকত্ব নেই। তাদের কোন ভোটাধিকার নেই, সমগ্র মিয়ানমার তো দূরের কথা, নিজেদের প্রদেশেই তাদের কোন শিার অধিকার নেই। আরাকান বা রাখাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ নিষিদ্ধ। এদের কোন লাইব্রেরী নেই, প্রায় সকল মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এদের পুরুষদের জোর করে রাষ্ট্রীয় খাতে বিনা বেতনে শ্রমিক হিসাবে কাজ করানো হয়। গবাদী পশু পালন করে, সামান্য জমিতে কৃষিকাজ করে অথবা বনে বাদাড় ঘুরে এটা সেটা কুড়িয়ে বিক্রি করে বা বন থেকেই কুড়িয়েই কিছু খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কেটে যায়। এদের ভ্রমনের উপর কঠোর নজরদারী আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অত্যন্ত সীমিত করে দেয়া হয়েছে এদের চিকিৎসা গ্রহণের সুবিধাকে। বড় কোন হাসপাতালে জটিল রোগের চিকিৎসা পাবার কোন অধিকার এদের নেই। মিয়ানমার সরকার তাদের নিজেদের ভেতর বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে শুধু তাই নয়, সন্তান ধারণের ব্যাপারেও এদের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এদের নারীদের করুণ অবস্থা বোধ করি আইয়ামে জাহিলিয়াকেও হার মানায়। শ্লীলতাহানী আর ধর্ষণ এদের কাছে আজ আর কোন মানবাধিকার হরণের নাম নয়। তাই যত্রতত্র নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা।

বর্তমান মিয়াানমারের রোহিং (আরাকানের পুরনো নাম) এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ইতিহাস ও ভূগোল বলছে, রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশে বাঙালি, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। তাদের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। রাখাইনে দু’টি সম্প্রদায়ের বসবাস ‘মগ’ ও ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মগের কথাটি বাংলাদেশে এতোটা পরিচিত নয়। দস্যু বৃত্তির কারণেই এমন নাম হয়েছে ‘মগ’দের। এক সময় তাদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মোগলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায় ইউকিডিয়া তথ্য মতে।

রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে। এভাবেথ সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লার রহমতে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা। তবে ইতিহাস এটা জানা যায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের এক রাজা ( নাম জানা নেই) এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু। এক সময় ব্রিটিশদের দখলে আসে এ ভূখন্ড। তখন বড় ধরনের ভুল করে তারা এবং এটা ইচ্ছাকৃত কিনা, সে প্রশ্নও জ্বলন্ত। তারা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তভূক্ত ছিল না। এ ধরনের বহু ভূল করে গেছে ব্রিটিশ শাসকরা। যার কারণে রোহিঙ্গাদের আজকের এই দূরাবস্থা।
ভারত ছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম মায়ানমার। সীমান্ত ভাগাভাগি করা ছাড়াও, এই দু’টি রাষ্ট্রের সীমান্ত এলাকায় বাস করা জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্ম এক। সম্প্রতি মায়ানমারে রাখাইন প্রদেশে জাতিগত দাঙ্গার কারণে এই সমন্ত মানুষগুলো এখন অসহায় অবস্থায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের সে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না, যার ফলে এই সমস্ত লোকগুলো এখন সমুদ্রে ভাসছে।

যদিও বাংলাদেশে সরকার রাজনৈতিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিপ,ে কিন্তু এই েেত্র বাংলাদেশের নাগরিকদের বিশাল একটা অংশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের প।ে আমাদের দেশ এতো বেশী ধনী না তবে আমাদের মানবিক চাহিদা আমাদের মত তারাও মানুষ তাদেরও বাঁচার অধিকার টুকু আছে। ইতিহাস বলে মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় ভারত যদি আমাদের কে আশ্রয় না দিতো তাহলে বিষয়টি কেমন দেখাতো। আমাদের মহান স্বাধীনতার সময় ভারতে যখন আমরা অস্থায়ী শিবির স্থাপন করি তখন কিন্তু তারা আমাদের তাড়িয়ে দেয়নি। তারা আমাদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। সে দিকটাও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের জন্য একটু বিবেচনা করা দরকার।
সারা বিশ্বে বড় বড় নেতারা মুখে মুখে মানুষের কথা বলে মানবাধিকারের কথা বলে বাস্তবে কি হচ্ছে সে দিকে তারা কতটুকু নজর দিচ্ছে! আজকে সমুদ্রে ভাসমান এই মানুষগুলো কি তাদের চোখে মানুষ নয়?। বিশ্ব বিবেক কি হারিয়ে গেছে! ধর্ম হলো মানুষ আলাদা সত্ত্বা কিন্তু আগে আমাদের যে পরিচয়টা সেটা তো হলো আমরা মানুষ। মানুষ হিসাবেও কি তারা সাহায্য বা আশ্রয় পায় না! কিন্তু এ কথা সত্যে যে আমরা গরীব দেশ-আমরা কি এতোটাই গরীব যে এই অসহায় লোকদেরকে আমরা আশ্রয় দিতে পারি না? কোমলমতি শিশুগুলিকে বুকে টেনে নিতে পারিনা!

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা ‘খুব সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধের’ শিকার বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) এ কথা বলেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আসা রোহিঙ্গারা বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হেলিকপ্টার গানশিপও ব্যবহার করেছে। গানশিপ-সেনা-বিজিপি-মগ যুবকদের হামলা, নৃশংসতা, বিভীষিকা তারা ভুলতে পারছে না। বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর নির্যাতনে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম ঘরছাড়া হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সীমান্তে জড়ো হয়েছে। সেনাবাহিনী ওই রাজ্যে নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিবৃতিতে ওএইচসিএইচআর বলেছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের আচরণ মানবতাবিরোধী অপরাধের মতোই। বিবৃতিতে গত জুনে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্য উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১২ সালের সহিংসতার ঘটনার সূচনা থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক বলে মেনে নেয়নি, স্বাস্থ্যসুবিধা ও শিার সুযোগ, এমনকি মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার ওই প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার।…রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার ধরন মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে গণ্য করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বুধবার ব্যাংককে বলেন, কমপে ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তবে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে।

বুধবার কক্সবাজারের কুতুপালং ও লেদার দুটি অনিবন্ধিত শিবিরে আলাপকালে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ১৭ নভেম্বরের হামলার বর্ণনা দেন। তাঁদের দাবি, সেদিন হেলিকপ্টার গানশিপ, সেনা, বিজিপি ও মগ যুবকদের হামলা ও নৃশংসতায় অন্তত ৯০ জন রোহিঙ্গা নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়। নিখোঁজ হয় চার শতাধিক নারী, পুরুষ, শিশু। হামলা-গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে লন্ডভন্ড হয় রাখাইনের মংডুর ১২টি রোহিঙ্গা গ্রাম।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর ভোরে রাখাইন সীমান্তে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় ৯ পুলিশসহ ১৪ জন নিহত হয়। মূলত এরপর থেকে সেখানে বিশেষ অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিজিপি।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ওই দিনের হামলার পর ১২টি গ্রামের অন্তত ১৮ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসেন কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। এর পর থেকেই বিভিন্ন সময় দিনের আলো কিংবা রাতের আধাঁরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান করছে।
প্রতিদিন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। অবাক করবার মতো, দুঃখ করবার মতো বিষয়-যারা বিশ্ব শান্তির বারতা নিয়ে এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে আমেরিকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের কানে কি রোহিঙ্গাদের বুক ফাটানো আর্তনাদ একবারের জন্যেও পৌছ্য়া না। অং সাং সুচি কিংবা ড. মোহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য (!) অবদান রেখে যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার হাতিয়ে নিয়েছেন; এত কাছে থেকে তারাও কি দেখতে পাচ্ছেন না, মানুষের এমন করুণ মৃত্যু! নাকি অগ্রহায়নের মৃদু শীতেই গভীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েছেন তারা? মিয়ানমারের এমন মানবিক বিপর্যয়ে শান্তির নেত্রী অং সাং সুচি নীরব কেন? শান্তির নোভেল হারানোয় ভয়ে! না অন্য কিছু ? জাতিসংঘ কি এই প্রতিবেদন দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিবেন সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরাও অভিন্ন মত প্রকাশ করেন। নিজ বাসভূমে রোহিঙ্গাদের বাঁচবার অধিকারের কথা নিয়ে বিশ্বের দু’একটি দেশ ছাড়া কোনো দেশে একটি শব্দও উচ্চারিত হচ্ছে না, মানববন্ধন হচ্ছে না, রাস্তা অবরোধ কিংবা প্রতিবাদী জনসমুদ্র হচ্ছেনা, প্রতিকী মোমবাতি জ্বালানো বা নেভানো হচ্ছে না! তাহলে কি মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে অসহায় মৃত্যুকেই বরণ করে নেবে? আর এমন হত্যার দৃশ্য দেখে চুপ থাকবে বিশ্ব বিবেক!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button