উপ-সম্পাদকীয়

ভালো শিক্ষক ও আদর্শ স্কুল

সফিউল্লাহ আনসারী

শিক্ষা,শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শব্দগুলোর সম্পর্ক নিবির।একটি ছাড়া আরেকটি অচল।শিক্ষকের অর্বতমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলেনা।আবার উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশহীন স্কুলে ভালো শিক্ষক তার মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে পারেনা।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায়ে এসেছে পরিবর্তন,লেগেছে যুগের হাওয়া।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই আধুনিক শিক্ষা অার পরিবর্তনটা কি শুধু অসুস্থ প্রতিযোগীতা আর ব্যাবসায়ীক মনোভাবকেই বাড়িয়েছে? বাড়ায়নি মানসম্মত আর আদর্শ শিক্ষার হার ? উত্তরটা হবে বেড়েছে দু‘টোই।একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখে সুনাম অর্জন করে তেমনি শিক্ষকতার মহান পেশায় যারা জড়িত থাকেন তাদেরকে আমাদের সমাজের সকল পর্যায়ের লোক সম্মান করেন।আমাদের এ সমাজ, সেসব মহান পেশার ব্যাক্তিকে শিক্ষক হিসাবে,ওস্তাদ নামে সম্বোধন করেন থাকে।

আমাদের ব্যাক্তি-রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।ধর্মীয় ভাবেও রয়েছে শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্ব । সেই গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিতে প্রয়োজন ভালো এবং মেধা সম্পন্ন শিক্ষক।আর ভালো শিক্ষকের ক্ষেত্র তৈরিতে দরকার আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এখানে শিক্ষা ও শিক্ষক শব্দদ্বয় একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। মুল কথা হচ্ছে-শিক্ষাই আলো, শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড,শিক্ষা ছাড়া সকল মত-পথ অন্ধকার। একটি কথা উল্লেখযোগ্য যে, প্রকৃত বা আদর্শ শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে আদর্শবান,ভালো শিক্ষক ছাড়া অসম্ভব ।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।শিক্ষকতার উদ্দেশ্য জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো,মনুষত্বকে ফুটিয়ে তোলা,একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক পাঠদানের মাধ্যমে তাকে আদর্শবান করে গড়ে তোলা।শুধু পাঠ্য বইয়ের নয় এর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে যেমন-নৈতিক শিক্ষা,চেতনা,দেশপ্রেম,মা-বাবা ও পরিবার ও সামাজিকতা শিক্ষাসহ আরো অনেক বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন।একজন শিক্ষক হচ্ছেন জাতি গঠন করার কারিগর। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর জন্য হবেন মডেল। শিক্ষকতা পেশাকে চাকরি বা অর্থ উপাজর্নের মাধ্যম নয়, মহান ব্রত হিসেবে গ্রহন করবেন এবং তা আন্তরিকতার সাথে অনেকটা নি:স্বার্থভারে বিলিয়ে দেবেন তার মেধা-মনন।শিক্ষাদানের কৌশল হিসেবে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবেন যাতে তার মেধার সকল পযার্য় বিকাশ হয়।একজন সঠিক লক্ষধারী স্বপ্নবাজ শিক্ষক নিজে স্বপ্ন দেখবেন সাথে তার শিক্ষার্থীদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাবেন ।সত্যি বলতে একজন ভালো শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর সার্বক্ষনিক অভিভাবক।তিনি আদেশ,উপদেশ,শাসন আর বন্ধুত্ব সুলভ আচরনে চমৎকার সম্পর্ককে শানিত করবেন শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলতে।আর এভাবেই শিক্ষার্থীর মঙ্গলের সাথেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে আদর্শ,শিক্ষক হবেন ভালো।একজন অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকের এটাই চাওয়া।

“কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সহজ-সরল ভাষায় সুন্দর বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে উপস্থাপনের মাধ্যমে ভালো শিক্ষকের নিদিষ্ট কয়েকটি গুণ রয়েছে, যেমন- ১. শিক্ষাদানে সবসময় প্রস্তুত থাকেন, ২. সবসময় পড়াশোনার মধ্যে থাকেন, ৩. সব ধরনের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলেন, ৪. ছাত্রছাত্রীদের সত্য ও আদর্শের পথে চালিত করেন, ৫. ছাত্রছাত্রীদের ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন, ৬. ছাত্রছাত্রীদের সাথে আত্মিক বন্ধন তৈরি করেন, ৭. আনন্দের সাথে পড়ান।”(সংগৃহীত)

যখন একজন শিক্ষক এসব আদর্শকে অর্থের কাছে বিকিয়ে দিয়ে শিক্ষাকে বাণিজ্যিক চিন্তার ভেতর ঢুকিয়ে দেন তখন শিক্ষা আর অাদর্শকে ধরে রাখতে পারেনা।শিক্ষক হয়ে পড়েন লোভী,শিক্ষা ব্যাবস্থা হয়ে পড়ে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।তখন সে নামধারী ভালো-আদর্শ থেকে মেধা-মননের বিকাশ আশা করা বোকামি।তারপরও আমাদের সমাজে সেই শিক্ষা ব্যবস্থাতেই আমাদের অভিভাবক অন্ধমোহে ছুটছেন সন্তানকে নিয়ে নোংরা প্রতিযোগীতায়,যেখানে ভবিষত আলোর বদলে আধাঁরকেই উসকে দিচ্ছে কতিপয় স্বার্থান্বেসীর অসৎ উদ্দেশ্যে।যা কখনো কাম্য নয়। আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে শিক্ষকদের সাথে নিয়ে এই শিক্ষা বাণিজ্য থেকে বেড়িয়ে আসি এবং সবাই মেধার মুল্যায়ন, আদর্শ ও নৈতিকতার চর্চা অব্যাহত রাখি।                                                                                                                                                                                  একজন ভালো শিক্ষক তিনিই, শিক্ষাকে যারা পূর্ণতা দেন,যিনি ভালো শিক্ষা দেন।সে কারনে যিনি শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। শিক্ষাদান একটি মহৎ শিল্প। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকই এই শিল্পের মাধ্যম ও কারিগর হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গুণসম্পন্ন একজন শিক্ষক দেশ ও সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।তেমনি সকল বিষয়ে শিক্ষাবান্ধন স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সমাজ ও রাষ্টের মুল্যবান সম্পদ।আর এসব সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষকদের চাহিদা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নত ও মানসম্মত করতে সরকারী উদ্যোগ বাস্তবায়ন জরুরী।পরিশেষে বলাযায়- একজন ভালো শিক্ষক কেবল শিক্ষার্থীকেই নয় একটি স্কুলকে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলতে পারেন।

 

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button