মা-ছেলে হত্যার ঘটনায় _দ্বিতীয় স্ত্রীর খোঁজে পুলিশ, আটক তৃতীয়জন

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর কাকরাইলে মা শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও ছেলে শাওনকে (১৭) হত্যার ঘটনায় শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিমের দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুঁজছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রমনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার নাবিদ কামাল এ তথ্য জানান। নাবিদ কামাল বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তাকে আটক করা হয়েছে। তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকেও খোঁজা হচ্ছে।’
জানা গেছে, আবদুল করিম তিন বিয়ে করেছেন। নিহত শামসুন্নাহার করিম তার প্রথম স্ত্রী। এরপর তিনি আরেক বিয়ে করেন। চার বছর আগে তার সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে তিনি শারমিন আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করেন। মুক্তা সিনেমায় অভিনয় করতেন। চলচ্চিত্রে প্রযোজনা করতে গিয়েই মুক্তার সাথে পরিচয় হয় আবদুল করিমের।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুল করিমের আরেক স্ত্রী মুক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এর আগে সকালে নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম, গৃহকর্মী রাশেদা ও দারোয়ান নোমানকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সময় গৃহকর্তা আবদুল করিম বাসার বাইরে ছিলেন। তবে তার আরো সংসার রয়েছে। অন্য স্ত্রীদের নিয়ে পারিবারিক কোনও ঝামেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন। পারিবারিক কলহ নাকি বাইরের কেউ অন্য কোনও কারণে দুজনকে হত্যা করেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। গৃহকর্তা আব্দুল করিমসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
বুধবার বিকেলে কাকরাইলের রাজমণি-ইশা খাঁ হোটেলের বিপরীত পাশের গলির ৭৯/১, মায়াকানন বাসার পাঁচতলায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাড়ির গৃহকর্মী রাশেদা বেগম জানান, বিকেলে ওই বাসায় কাজ করতে আসেন তিনি। এসেই রান্না ঘরে গিয়ে থালা-বাসন ধোয়ার কাজে লেগে যান। এ সময় কেউ একজন এসে রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর খালাম্মার (শামসুন্নাহার) ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুনতে পাই। পরে বাড়ির দারোয়ান নোমান এসে দরজা খুলে দিলে তাদের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাই।
দারোয়ান নোমান জানান, সিঁড়ি দিয়ে এক ব্যক্তি নিচে নামার সময় বলেন- গিয়ে দেখেন পাঁচতলায় কোনো ঝামেলা হচ্ছে। তখন উপরে এসে দুজনের লাশ দেখতে পাই।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘ঘরের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় এক নারী পড়েছিলেন। আর সিঁড়িতে পড়ে ছিলেন ১৯-২০ বছর বয়সী এক তরুণ। আমরা জেনেছি- তারা সম্পর্কে মা-ছেলে। মরদেহগুলো উপুড় হয়ে পড়ে থাকায় প্রাথমিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন না পেলেও শরীর রক্তাক্ত দেখেছি।’
জানা গেছে, আবদুল করিম ও শামসুন্নাহার দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে নিহত শাওন সবার ছোট। তাদের বড় দুই ছেলে লন্ডন ও কানাডায় থাকেন। রাজধানীর শ্যামবাজারে আবদুল করিমের ব্যবসা রয়েছে। ঘটনার সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাণেও বিনিয়োগ করে আসছেন আবদুল করিম।