সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্রীপুরে প্রাথমিকে নোট ও গাইড বই ব্যবহারের অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইড বই কিনতে বাধ্য করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার । শিক্ষকদেরকে বাধ্য করাচ্ছেন নোট ও গাইড বই ব্যবহার করতে।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ২০নং টেপির বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রশাসক, দূর্নীতি দমন কমিশন, মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে দায়েরকৃত অভিযোগে জানা যায়, গত তিন মাস যাবৎ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে নোট, গাইড ও সাজেশন বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করিয়েছেন এবং প্রতিটি বইয়ের মূল্য বাবাদ ১’শ টাকা করে আদায় করছেন।
সরেজমিনে মাওনা ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে ৫ম শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীদের হাতে সাজেশন বই পাওয়া যায়। টেপিরবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ আরো বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্র্তা কামরুল হাসান যোগদানের পর থেকেই নোট ও গাইড বইয়ের প্রচলন তৈরী করে তা বাধ্যতামুলক হিসেবে মৌখিক নোটিশ জারি করেছেন। সরকারী ভাবে এসব নিষিদ্ধ থাকার পরও এগুলো বাধ্যতামুলক করায় প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর ইউনিয়নের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদেরকে এসব বই বিক্রি করার জন্য আদেশ করেছেন। অনেক সময় শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। মাওনা ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবির খান বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আদেশেই আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে এসব বই বিক্রি করেছি। একই বিদ্যালয়ের ৫ম শেণীর শিক্ষার্থী ফামমিদা আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন।
এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদ পত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসানের স্বাক্ষরকৃত শিক্ষার্থীর নামবিহীন ও অন্যান তথ্য লেখাবিহীন সনদপত্র অভিভাবকের হাতেও রয়েছে। গত ২য় সাময়িক পরীক্ষা চলাকালীন নির্ধারিত একই সময়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা হলরুমে চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন, পরীক্ষা থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে পারেনি। প্রতিযোগিতা ছাড়াই পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়। গাজীপুর সদর উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন অনৈতিক ও দূর্নীতির অভিযোগে গাজীপুর শিক্ষক সমাজের ব্যানারে তার বিরুদ্ধে পোষ্টার ও লিফলেট ছাপিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে শিক্ষক সমাজ । তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগে দু’টি বিভাগীয় মামলা রয়েছে । সে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে অন্যান্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকাদের নিয়ে পরিদর্শনে যান যা ইতিপূর্বেই বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে উঠছে শিক্ষক মহলে ।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব নোট ও গাইড সাজেশন সরকারী ভাবে অবৈধ, কেউ হয়তো নিজেরা লাভবান হতে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন, এর সাথে আমি জড়িত নই।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন নানা অনিয়মের বিষয়ে আমি সংবাদ পেয়েছি তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড: দেওয়ান হুমায়ুন কবির জানান শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করে দোষি প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।