গুনীজন/প্রতিভাপ্রাণের বাংলাদেশ

মৃত্যুর আগে ‘মুক্তিযোদ্ধা’র স্বীকৃতি চান আমির শেখ

স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও ভালুকার আমির উদ্দিন শেখের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেনি। বয়সের ভারে নতজানু আমির উদ্দিন শেখের আকুতি সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাওয়ার পর যেন তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলার পাইলাব গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারের রহিম উদ্দিন শেখের ছেলে আমির উদ্দিন শেখ। কলেজ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে তিনি জড়িত ছিলেন তিনি। পড়াশোনার পাঠ শেষ করার পর পরই তরুণ বয়সেই স্থানীয় ১১নং রাজৈ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাায়িত্ব পান। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আমির উদ্দিন শেখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণসহ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে আফসার বাহিনী গঠন করা হলে ১১নং রাজৈ ইউনিয়নের খুর্দ্দ গ্রামের পইদ্যার টেক নামক স্থানে স্থাপন করা হয় বাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে পিতা রহিম উদ্দিনের কার্তুজ বন্দুক নিয়ে ট্রেনিংয়ে অংশ নেন আমির উদ্দিন শেখ।

ক্যাম্পের কমান্ডার ও আফসার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার মোঃ চাঁন মিয়া প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র সূত্রে জানা যায়, আমির উদ্দিন শেখ  আফসার বাহিনীর ১ম ব্যাটালিয়ানের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কমান্ডার চাঁন মিয়ার অধীনে বিভিন্ন রণাঙ্গণে বীরত্বে সাথে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধত্তোর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী ও আঞ্চলিক অধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র (নন্বর ১২১৯৮৯) পেলেও সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার কোন তালিকায় আমির উদ্দিন শেখের নাম তালিকা ভুক্ত হয়নি।

বর্তমানে অনেকটাই চলাফেরা করতে অক্ষম আমির উদ্দিন শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, ৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তিনি বিমুখ হন এবং পরবর্তী ২০১০ সালে বর্তমান সরকার বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সরকারিভাবে তালিকাভুক্তির উদ্যোগে নিলে ভালুকা উপজেলায় ৭শ’ ১৯ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ওই বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় আমির উদ্দিনের উঠে আসে ২৬ নন্বর ক্রমিকে। এ জন্য ৩ জন সহযোদ্ধা আঃ খালেক, মুক্তিবার্তা (লাল বই) নং ০১১৫০৬০৩৬৬, রমিজ উদ্দিন খান মুক্তিবার্তা (লাল বই) নং ০১১৫০৬০৫৩৪, মকবুল হোসেন মুক্তিবার্তা (লাল বই) নং ০১১৫০৬০৫৪২, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রত্যয়ন পত্র, আফসার বাহিনীর টু আই সি আবুল কাসেম কর্তৃক পত্র এবং তিনি যে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সেই ১১নং রাজৈ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যয়নপত্রসহ নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য যথা নিয়মে আবেদনপত্রও জমা দিয়ে ছিলেন।

২০১৪, মে  মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ভালুকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে আসলে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে আমির উদ্দিন শেখ তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেন এবং ওই আবেদনটি জামুকার ডিজি বরাবর (আবেদন নং ডিজি ২০৭৫৪, তারিখ ৫/৫/২০১৪) প্রেরণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সনের ৩১ আগস্ট অনলাইনে আবেদন করছেন (যার নন্বর ডিজি-১১৮৬৫২৯)। আমির উদ্দিন শেখের শেষ মিনতি সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাওয়ার পর যেন তার মৃত্যু হয়।

আমির উদ্দিন শেখের মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী ভালুকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মফিজুর রহমান জানান, সরকারিভাবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করা আছে। বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button