ভালো বন্ধু বই | সফিউল্লাহ আনসারী

বই মানুষের ভালো বন্ধু।বই পড়লে জ্ঞাণ বাড়ে।বই পড়লে মানুষক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। একটা বই একজন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।সৃজনজনশীল ও সৃষ্টিশীলতার জন্য বই অপরিহার্য।যারা নিয়মিত বই পড়েন বৃদ্ধ বয়সেও তাদের মস্তিষ্ক থাকে তীক্ষ্ণ ও স্বাভাবিক ।অথচ আমাদের সমাজে এই বই পড়ার মতো গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে অনিহা লক্ষনীয়।এভাবে পাঠ অভ্যাসের প্রতি অনীহা বাড়তে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্ম পিছিয়ে পড়বে জানা থেকে।অনেকে বলে, প্রযুক্তি নির্ভরতা মানুষকে দিনকে দিন বই পড়া থেকে দুরে নিয়ে যাচ্ছে,কথাটা অনেকাংশে ঠিক। তবে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা বই পড়া চালিয়ে যেতে পারি।এর জন্য ইচ্ছে শক্তি ও মানষিকতার পরিবর্তন দরকার।
প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এগিয়েছি বহুদুর।প্রযুক্তির ব্যাবহারে আমাদের শিশুরা আজ গেম নির্ভর,তরুন-যুবকরা ফেসবুক নির্ভর,নারীরা টেলিভিশন নির্ভর হয়ে পড়ছে যার দরুন বই পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে।এই বই বিমূখতা আমাদের প্রজন্মকে মননশীল চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে মেধার অপব্যাবহারের দিকে ধাবিত করছে।প্রযুক্তির ব্যাবহার ব্যাক্তি ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বকে বাড়িয়েছে ঠিক, মানুষের একসময়ের বিনোদনের বড় মাধ্যম বই পাঠক হারিয়ে ।আর আগের মতো পাঠ হচ্ছেনা গল্প-উপন্যাসের বইও।প্রযুক্তির বেশী পরিমান ব্যাবহার ক্ষতি করলেও,বই পাঠ ব্রেনকে উজ্জীবিতসহ অনেক উপকার করে।বই পড়লে স্মৃতিভ্রষ্টতা প্রতিরোধ এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে ,বই মানুষের মেধাশক্তির সাথে কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করে থাকে।নিয়মিত বই পড়েন এমন লোকদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমার হার অনেক কম।বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষের মনের ভিতর একটি জগত তৈরি হয় যাতে সে আপন অবস্থানে নিজেকে প্রকাশ করে নিজের মতো।একজন আদর্শ লেখক সৃষ্টিতে বইয়ের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর একটি লেখায় বই পড়া নিয়ে বলেছেন-“আমাকে মাঝে মাঝেই অনেকে জিজ্ঞেস করে, ভালো লেখক হওয়ার কোনো একটা শর্টকাট পদ্ধতি আমার জানা আছে কী না। আমি সবসময়েই বলি, ভালো লেখক হওয়ার একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে বই পড়া। যে যত বেশি বই পড়বে সে তত ভালো লিখতে পারবে। আমি এটা জোর দিয়ে বলি, কারণ আমাদের পরিবারের হুমায়ূন আহমেদ এই দেশের একজন অসাধারণ লেখক ছিল, আর সে একেবারে শিশু বয়স থেকে শুধু বই পড়ে আসছে। আমার মনে হয় সে জন্যে সে এত সুন্দর লিখতে পারত।
বই পড়ে সবাই যে সফল লেখক হয়ে যাবে তা নয় কিন্তু বই পড়লে নিশ্চিতভাবে নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন হয়।”
মানবিক গুনাবলির প্রকাশ ও জ্ঞাণ ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য বই পাঠের বিকল্প নেই।আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীল চেতনা বিকাশে বই অধ্যয়নের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।অমর একুশে বইমেলা আমাদের বাঙালী জাতীর শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির লেখক-পাঠকের এক মহা মিলন মেলা।ভাষার মাসে বাঙালী চেতনাকে উজ্জীবিত করার ।পাঠকের বই পড়াকে সহজলভ্য করতে বইমেলা আমাদের বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপুর্ণ।ভাষার মাসে আমাদের শুধু বই প্রকাশের প্রতিযোগীতা নয়,বই পড়ার প্রতিযোগীতা করা উচিত।দেশ-জাতীর ভবিষ্যত উজ্জল করতের মানবিকতা ও মননশীল চেতনার উজ্জীবনে আমাদের বই পাঠে মনোযোগী হয়ে বইকে ভালো বন্ধু হিসেবে সঙ্গী করায় উদ্যোগী হওয়া সময়ের দাবী।