আন্তর্জাতিক

ভিড়ের ওপর দিয়ে লরিটি ছুটে যায় দুই কিলোমিটার

ভালুকা নিউজ ডট কম; আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিসে রাত তখন ১১টার মতো। বাস্তিল দুর্গ পতনের দিবসে সরকারি ছুটি।দিবসটি উপলক্ষে সমুদ্র তীরে আয়োজন করা হয়েছে আতসবাজির প্রদর্শনী। আর সেটা দেখতে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

কিছুক্ষণ আগেই তারা বিমান বাহিনীর একটি জমকালো অনুষ্ঠানও উপভোগ করেছে। প্রমনাদ ডেজ অংগ্লে শহরের একটি বিখ্যাত সড়ক। সমুদ্রের পারেই লম্বা এই রাস্তা। সেখানে নেমে এসেছে বহু পরিবারের ঢল।

হঠাৎ করেই ওই রাস্তা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসে সাদা রঙের একটি লরি এবং ভিড়ের ভেতর দিয়ে একেঁবেঁকে চলতে থাকে। আতঙ্কে লোকজন ছুটতে শুরু করে চারদিকে।

লোকজনের ওপর দিয়ে ট্রাকটি ছুটে চলে দুই কিলোমিটার পথ। নিহতের সংখ্যা যতো সম্ভব বাড়াতেই লরিটিকে এভাবে চালানো হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সবাই বলছে, দৌড়াও দৌড়াও। একটা হামলা হয়েছে। পালাও পালাও। আমরা তখন কিছুর গুলির শব্দ শুনলাম। ভেবেছিলাম হয়তো আতসবাজির আওয়াজ। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। এক পর্যায়ে আমরাও দৌড়াতে শুরু করলাম। নিরাপত্তার জন্যে আশ্রয় নিলাম ওখানকার একটি হোটেলে, বলেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ ট্রাকটিকে থামাতে সক্ষম হয়। কিন্তু ততোক্ষণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে আরো বহু মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। হতাহতদের অনেকেই নারী ও শিশু।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, রাস্তার ওপর পড়েছিলো বহু মানুষ। সেখানে মানুষ ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। বহু বহু মানুষ।

তিনি বলেন, আমি ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে চাইছিলাম। ওসব দেখতে চাইনি। এতো ভয়াবহ আর কষ্টের এক দৃশ্য ছিলো যে তাকানো যাচ্ছিলো না। আশেপাশের লোকজন চিৎকার করে কাঁদছিলো। তাদের সারা শরীরে রক্ত। চারদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত।

খবরে বলা হয়, ট্রাকের চালক এক পর্যায়ে লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে চালক নিহত হয়। লরিটি সামনের অংশ বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ভেতর থেকে পুলিশ বন্দুক ও গ্রেনেড উদ্ধার করেছে।গত নভেম্বর মাসে প্যারিসের হামলার পর জরুরি অবস্থার মধ্যেই নিসে সবশেষ এই হামলাটি চালানো হলো।

প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ নিসে ছুটে গেছেন। বলেছেন, ফ্রান্সের ওপর এটা আরো এক সন্ত্রাসী হামলা। ফরাসী প্রেসিডেন্ট বলেন, “ফ্রান্সকে আবারও এক ভীতিকর হামলা আঘাত হেনেছে। আক্রমণের সব বৈশিষ্ট্য থেকেই স্পষ্ট যে এটা সন্ত্রাসী হামলা। এটা পরিষ্কার এই সন্ত্রাসকে রুখতে আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে। ফ্রান্সে জরুরী অবস্থা এমাসের শেষের দিকে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা আরো তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস ঘোষণা করেছেন তিনদিনের জাতীয় শোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button