আন্তর্জাতিক

দানা মাঝির জন্য বাহরাইনের রাজার উপহার

দানা মাঝির কথা মনে আছে? টাকা না থাকায় স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে ৬০ কিমি পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য হেঁটে রওনা হয়েছিলেন ভারতের ওড়িশ্যার একটি হাসপাতাল থেকে। পাশে চোখ মুছতে মুছতে হাঁটছিল তাঁর মেয়ে। খবরটি ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

সেই দানা মাঝি আবারও সংবাদে। তাঁর দুর্দশার খবর সংবাদপত্র পড়ে জানতে পারেন বাহরাইনের রাজা হামাদ বিন ইশা আল খলিফা। দানা মাঝির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খলিফা। দিল্লির বাহরাইন দূতাবাসে পৌঁছে দেন প্রায় নয় লাখ টাকার চেক।

সেই চেক নিতেই বৃহস্পতিবার জীবনে প্রথমবার বিমানে চেপে দিল্লি গিয়েছিলেন দানা মাঝি। এর আগে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রীও অর্থ সহায়তা করেন। ওড়িশ্যার কয়েকজন বিধায়কও দানা মাঝির হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। সাহায্য এসেছে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেও। রাজধানী ভুবনেশ্বরে আদিবাসী শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়েছে তাঁর তিন মেয়ের আজীবন পড়াশোনার।

মেয়েদের সেই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েই দিল্লির বিমান ধরেন তিনি। রাজার চেক নিতে যাওয়ার সময়েও তাঁর পড়নে ছিল নীল লুঙ্গি আর একটা পুরনো জামা। কাঁধে গামছা।

বাহরাইন দূতাবাসে সংবাদ মাধ্যমকে দানা মাঝি নীল রঙের চেকটা দেখান। ব্যাংক অব বাহরাইন এন্ড কুয়েতের ওই চেকে লেখা টাকার অংকটা ৮,৮৭,৯৪৯ ।

সংবাদ মাধ্যমকে দানা মাঝি জানান, এই সব টাকাই তিনি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদী আমানত হিসাবে রেখে দেবেন, যাতে তাঁর মেয়েদের পড়াশোনার জন্য খরচ করতে পারেন।

মেয়েদের পুলিশ বা ডাক্তার করার ইচ্ছা দানা মাঝির।

দানা মাঝির স্ত্রী অমং দেই (৪২) যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ আগস্ট রাতে ওড়িশ্যার কালাহান্ডি হাসপাতালে মারা যান। দলিত শ্রেণির হওয়ায় লাশ বহনে কোনো গাড়ি দিতে পারবে না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দানা মাঝিকে সাফ জানিয়ে দেয়।

উপায়ান্ত না পেয়ে স্ত্রীর মরদেহ কাপড়ে মোড়ানোর পর কাঁধে করে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা দেন তিনি। পথে এক সাংবাদিক বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে তিনি স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে হেঁটেছেন ১০ কিলোমিটার। সূত্র: বিবিসি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button